তৎপরে আমরা ইস্লামাবাদ অভিমুখে যাত্রা করিলাম। ঘটনাচক্রে ইহাই বাস্তবিক অমরনাথ-যাত্রা হইয়া দাড়াইল।
১৯শে জুলাই। প্রথম অপরাহ্নটীতে বিতস্তা নদীতীরে এক জঙ্গলের মধ্যে আমরা চির-অন্বেষিত পাণ্ড্রেন্থান মন্দির আবিষ্কার করিলাম। (পাণ্ড্রেন্থান কি পাণ্ড্রেস্থান——পাণ্ডবগণের স্থান)
মন্দিরটী গাঢ় ফেনায় ঢাকা এক পুষ্করিণীর মধ্য হইতে উঠিয়াছে। ইহা ভারী ভারী ধূসর চূণাপাথরের নির্মিত বহু প্রাচীন কালের একটি ক্ষুদ্র দেউল। ইহাতে একটী স্বল্পায়তন প্রকোষ্ঠ, তাহার পূর্ব্ব, পশ্চিম, উত্তর, দক্ষিণ—চারিদিকে চারিটী দুয়ার। বাহির হইতে দেখিতে ইহা চৌতারায় বসান চারিপার্শ্বে ফোকর-বিশিষ্ট একটী মাথাকাটা পিরামিডের মত সরু হইয়া উঠিয়াছে, তাহার উপরে আবার একটী ঝোপ জন্মিয়াছে। ইহার স্থাপত্যে ত্রিপত্র ও ত্রিভুজাকার খিলান পরস্পর এবং সরলরেখা-বিশিষ্ট সরদালের সহিত এমন একভাবে মিশান ছিল যে, সচরাচর সেরূপ দেখিতে পাওয়া যায় না। মন্দিরটী অদ্ভুত রকম দৃঢ়ভাবে নির্ম্মিত হইয়াছিল এবং এই সকল বিভিন্ন নির্ম্মাণপদ্ধতির মধ্যে যে পার্থক্যটুকু অবশ্যম্ভাবী, তাহা ভারী ভারী নক্সার কাজে কতকটা ঢাকা পড়িয়াছিল।
বনমধ্যস্থ পুকুরটীর ধারে পৌঁছিবার পর সেই ক্ষুদ্র মন্দিরটীর অভ্যন্তরে প্রবেশ করিয়া তাহার ভিতরের কারুকার্য্যগুলি ভাল করিয়া দেখিবার কোন উপায় না দেখিয়া আমরা সকলেই অত্যন্ত বিষণ্ণ হইলাম। কয়েকখানি পথনির্দেশক পুস্তকে সেগুলি নক্সা ও কারিগরী বিষয়ে ‘পুরাদস্তর প্রাচীন সভ্য যুগের’ অর্থাৎ যাবনিক ও রোমক বলিয়া উল্লিখিত হইয়াছিল।
৯০