পাতা:স্বামিজীর সহিত হিমালয়ে - ভগিনী নিবেদিতা (১৯৫১).pdf/১৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রত্যাবৰ্ত্তন-পথে শ্রীনগরে

দিতে পারে, তাঁহার এইরূপ অভিপ্রায়ের বিরুদ্ধে অমরনাথযাত্রী সাধুগণের তর্কগুলি বড়ই মর্ম্মস্পর্শী ছিল। তাঁহারা বলিয়াছিলেন, “অন্ততঃ শিখদের দেশে এটী করিবেন না, স্বামিজী” এবং তিনিও অবশেষে সম্মতি দিয়াছিলেন। কিন্তু উপস্থিত তিনিও তাঁহার মুসলমান মাঝির শিশু কন্যাটিকে উমারূপে পূজা করিতেছিলেন। ভালবাসা বলিতে সে শুধু সেবাকরা বুঝিত এবং স্বামিজীর কাশ্মীরত্যাগের দিনে সেই ক্ষুদ্র শিশু তাঁহার জন্য একথাল আপেল সানন্দে নিজে সমস্ত পথ হাঁটিয়া টঙ্গায় তুলিয়া দিয়া আসিয়াছিল। স্বামিজীকে তৎকালে সম্পূর্ণ উদাসীন বোধ হইলেও তিনি বালিকাকে কখনও ভুলিয়া যান নাই। কাশ্মীরে থাকিতে থাকিতেই তিনি একদিনকার কথা প্রায়ই সানন্দে স্মরণ করিতেন। বালিকা সে দিন নৌকার গুণ টানিবার রাস্তায় একটি নীলবর্ণের ফুল দেখিতে পায় এবং সামনে বসিয়া উহাকে একবার এধারে একবার ওধারে আঘাত করিতে করিতে কুড়ি মিনিট কাল সেই ফুলটির সহিত একাকী বসিয়া থাকে।

 নদীতটে একখণ্ড জমি ছিল, তাহার উপর তিনটি চেনার গাছ জন্মিয়াছিল। ইহাদের কথা ভাবিলেই আমরা এই সময়ে এক বিশেষ আনন্দ অনুভব করিতাম। কারণ কাশ্মীরের মহারাজ উহা স্বামিজীকে দিবার জন্য উৎসুক হইয়াছিলেন এবং আমাদের যে ভাবী কার্য্যে “দেশের লোকের দ্বারা, দেশের লোকের জন্য এবং সেবক ও সেবা উভয়েরই প্রীতিকর”–এই মহান্ ভাব স্থূলরূপ পরিগ্রহ করিবে, উক্ত স্থানটিকে তাহারই এক কর্ম্ম-কেন্দ্র বলিয়া আমরা সকলে এক মানসচিত্র অঙ্কিত করিলাম।

১২৭