পাতা:স্বামিজীর সহিত হিমালয়ে - ভগিনী নিবেদিতা (১৯৫১).pdf/১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
স্বামিজীর সহিত হিমালয়ে

আলেখ্যাকারে আখ্যানচিত্রিত বাতায়ন, রাজন্যবর্গের মণিময় সিংহাসন, বীর যোদ্ধৃবৃন্দের ধ্বজপতাকা, যাজকগণের বিচিত্র অঙ্গাভরণ, নগরীর বিপুল সাজসজ্জা এবং প্রমত্ত দাম্ভিককুলের হর্ম্মাবলী—একে একে সকলেই আসিল, সকলেই প্রত্যাখ্যাত হইল।

 বিদেশীর উপহাসস্থল কিন্তু দেশবাসীর পূজাম্পদ ভিক্ষুকের বেশে তাঁহাকে আমরা দেখিয়াছি; তাই মনে হয়, শ্রমলব্ধ জীবিকা, সামান্য কুটীরে বাস এবং শস্যক্ষেত্রবাহী সাধারণ পথ—কেবল এই সমস্ত পারিপার্শ্বিক দৃশ্যপটের মধ্যেই এমন জীবনের প্রকৃত শোভা ফুটিতে পারে।

 তাঁহার স্বদেশবাসী বিদ্বান, রাষ্ট্রনীতি-বিশারদ পণ্ডিতমণ্ডলী তাঁহাকে যেমন ভালবাসিতেন, নিরক্ষর অজ্ঞেরাও তাঁহাকে তেমনি ভালবাসিত। তাঁহার নৌকার মাঝি-মাল্লারা, কতক্ষণে তিনি আবার নৌকায় ফিরিয়া আসিবেন, পথ চাহিয়া থাকিত। যে গৃহে তিনি অতিথি হইতেন, সেই গৃহের পরিচারক ভৃত্যদের মধ্যে কে আগে তাঁহার সেবা করিবে, কাড়াকাড়ি পড়িয়া যাইত। আর এই সকল ব্যাপার সর্ব্বদাই যেন একটা খেলার আবরণে জড়িত থাকিত। ‘তাহারা যে ভগবানের খেলার সঙ্গী’—এই ভাব তাহাদের মনে স্বতঃই জাগরূক থাকিত।

 যাহারা এরূপ শুভমুহূর্ত্তের আস্বাদ পাইয়াছেন, জীবন তাঁহাদের নিকট অধিকতর মূল্যবান, অধিকতর মধুময়। দীর্ঘ নিরানন্দ রজনীর তালবন-সঞ্চারী বায়ুও উদ্বেগ ও আশঙ্কার পরিবর্ত্তে তাঁহাদের কর্ণে শান্তিময় ‘শিব! শিব!’ বাণী ধ্বনিত করিয়া তোলে।