বলেন, উহা ত অন্য এক প্রকারে নিয়ম পালন মাত্র।” তৎপরে তিনি তুরীর অবস্থা সম্বন্ধে কিছু বুঝাইতে চেষ্টা করিলেন। কিন্তু যাঁহাকে তিনি কথাগুলি বলিলেন, তাঁহার শুনিবার কান ছিল না।
১৬ই সেপ্টেম্বর—মঙ্গলবারের দিন তিনি আর একবার মধ্যাহ্ন-ভোজনে আমাদের ক্ষুদ্র ছাউনীটিতে আসিলেন। অপরাহ্ণে এরূপ জোরে বৃষ্টি হইতে আরম্ভ হইল যে, তাঁহার ফিরিয়া যাওয়া ঘটিল না। নিকটে একখানি টড্কৃত ‘রাজস্থান’ পরিয়াছিল, তাহাই উঠাইয়া লইয়া কথায় কথায় মীরাবাই-এর কথা পাড়িলেন। বলিলেন, “বাঙ্গালার আধুনিক জাতীয় ভাবসমূহের দুই-তৃতীয়াংশ এই বইখানি হইতে গৃহীত হইয়াছে। যাহার সকল অংশই উত্তম এমন টডের মধ্যেও, যিনি রাজী হইয়াও রাজপদ পরিত্যাগ করিয়া কৃষ্ণপ্রেমিকাগণের সঙ্গে ভূমণ্ডলে বিচরণ করিতে চাহিয়াছিলেন, সেই মীরাধাই-এর গল্পটী তাঁহার সর্ব্বাপেক্ষা প্রিয় ছিল। তিনি যে দৈন, প্রার্থনাপরতা এবং সর্ব্বজীবসেবা প্রচার করিয়া-ছিলেন এবং উহা যে শ্রীচৈতন্যপ্রচারিত ‘নামে রুচি, জীবে দয়া’র তুলনাযোগ্য, তাহাও উল্লেখ করিলেন। মীরাবাই স্বামিজীর অন্যতম মুখ্য পৃষ্ঠপোষিকা। বিখ্যাত দস্যুদ্বয়ের হঠাৎ স্বভাব-পরিবর্ত্তন এবং শ্রীকৃষ্ণবিগ্রহের দুই ভাগ হইয়া তাঁহাকে গ্রাস করা আর তাহাতেই তাঁহার দেহাবসান প্রভৃতি যে সকল গল্পের কথা লোকে অন্যান্য সুত্রে অবগত আছে, সে গুলিকে তিনি মীরাবাই-এর গল্পের অন্তর্ভুক্ত করিতেন। একবার তিনি মীরাবাই-এর একটা গীত আবৃত্তি এবং অনুবাদ করিয়া একজন স্ত্রীলোককে শুনাইতেছেন, শুনিয়াছিলাম। আহা, যদি ইহার সবটা মনে রাখিতে পারিতাম!
১৩০