প্রথম পরিচ্ছেদ
গঙ্গাতীরস্থ বাড়ীখানি
গঙ্গাতীরস্থ বাড়ীখানির সম্বন্ধে স্বামিজী একজনকে বলিয়াছিলেন, “ধীরা মাতার ক্ষুদ্র বাড়ীখানি তোমার স্বর্গ বলিয়া মনে হইবে। কারণ ইহার আগাগোড়া সবটাই ভালবাসা মাথা।”
বাস্তবিকই তাই। ভিতরে এক অবিচ্ছিন্ন মেলা-মেশার ভাব এবং বাহিরে প্রতি জিনিসটী সমান সুন্দর; শ্যামল বিস্তৃত শম্পরাজি, উন্নত নারিকেলবৃক্ষগুলি, বনমধ্যস্থ ছোট ছোট বাদামী রঙ্গের গ্রামগুলি—সবই সুন্দর! অদূরে এক গাছের উপর যেন সদাশিবের আশীর্ব্বাদ আমাদের নিকট আনিয়া দিবার জন্যই একটি নীলকণ্ঠ কুলায় নির্ম্মাণ করিয়াছিল, সেটীও সুন্দর। সকাল বেলা ছায়া বাড়ীর পিছন দিকে পড়িত, কিন্তু বৈকালে আমরা সাম্নের দিকে বসিয়া যেন সিংহগৌরবে গরীয়দী জননী জাহ্নবীর মানস পূজা করিতে এবং দক্ষিণেশ্বর দর্শন করিতে পাইতাম।
যাঁহাদের মনে অতীতের স্মৃতি জাগরূক রহিয়াছে, এমন অনেকে মাঝে মাঝে আসিতেন এবং আমরা স্বামিজীর অষ্টবর্ষব্যাপী ভ্রমণের কিছু কিছু বিবরণ শুনিতে পাইতাম; গ্রাম হইতে গ্রামান্তরে গমনকালে তাঁহার নাম পরিবর্তনের কথা, তাঁহার নির্ব্বি কল্প সমাধির কথা এবং যাহা বাক্যের অতীত ও সাধারণ দৃষ্টির বহির্ভূত, যাহা কেবল প্রেমানুগত হৃদয়েরই অনুভবগম্য, পরার্থে স্বামিজীর সেই পবিত্র মর্ম্মবেদনার কথাও আমরা শ্রবণ করিতাম।
৫