প্লেগসংক্রান্ত ঘোষণা-শ্রবণে তাঁহার প্রত্যাবর্তনের দিবস পর্য্যন্ত আমরা ইতোমধ্যে আর তাঁহাকে দেখিতে পাই নাই।
৩রা মে। তারপর আমাদের মধ্যে দুইজন পরমারাধ্যা শ্রীশ্রীমাতাঠাকুরাণীর গৃহে তাঁহার সাক্ষাৎ পাইলেন। তখনকার রাজনৈতিক গগন তমসাচ্ছন্ন। একটা ঝড়ের সূচনা দেখা যাইতেছিল। সেই সময় প্রতি রজনীতে চন্দ্র আরক্ত কুরাসামগুলে পরিবৃত দৃষ্ট হইত। সাধারণের ধারণা—ইহা প্রজাগণের মধ্যে অশান্তির সূচক এবং ইতঃপূর্ব্বেই প্লেগ, আতঙ্ক ও দাঙ্গা-হাঙ্গামা নিজ নিজ ভীষণ মূর্ত্তি দেখাইতে আরম্ভ করিয়াছিল। আচার্য্যদেব আমাদের দুই জনকে লক্ষ্য করিয়া কহিলেন, “না কালীর অস্তিত্ব সম্বন্ধে কতকগুলি লোক ব্যঙ্গ করে। কিন্তু ঐ দেখ, আজ মা প্রজাগণের মধ্যে আবির্ভূতা হইয়াছেন। ভয়ে তাহারা কূলকিনারা দেখিতে পাইতেছে না এবং মৃত্যুর দণ্ডদাতা সৈনিকবৃন্দের ডাক পড়িয়াছে। কে বলিতে পারে যে, ভগবান শুভের ন্যায় অশুভ-রূপেও আত্মপ্রকাশ করেন না! কিন্তু কেবল হিন্দুই তাঁহাকে অশুভরূপেও পূজা করিতে সাহসী হয়।”
তিনি ফিরিয়া আসিয়াছেন এবং যথাসম্ভব আবার পূর্ব্বের ন্যায় দিন কাটিতে লাগিল; যথাসম্ভব–কেন না মহামারী দেখা দিয়াছিল এবং জনসাধারণকে সাহস দিবার জন্য ব্যবস্থাও চলিতেছিল। যতদিন এই আশঙ্কা সব দিক আতঙ্কিত করিয়া রাখিয়াছিল, ততদিন স্বামিজী কলিকাতা পরিত্যাগ করিতে সম্মত হইলেন না। এই আশঙ্কা কাটিয়া গেল বটে, কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে সেই সুখের দিনগুলিও অন্তর্হিত হইল। আমাদেরও যাত্রা করিবার সময় আসিল।
১৩