আর এইখানেই, এই নৈনীতালেই স্বামিজী রাজা রামমোহন রায় সম্বন্ধে অনেক কথা বলেন, তাহাতে তিনি তিনটী বিষয় এই আচার্য্যের শিক্ষার মূলসূত্র বলিয়া নির্দেশ করেন—তাঁহার বেদান্ত-গ্রহণ, স্বদেশপ্রেম-প্রচার এবং হিন্দুমুসলমানকে সমভাবে ভালবাসা। এই সকল বিষয়ে রাজা রামমোহন রায়ের উদারতা ও ভবিষ্যদ্দর্শিতা যে কার্য্যপ্রণালীর সূচনা করিয়াছিল, তিনি নিজে মাত্র তাহাই অবলম্বন করিয়া অগ্রসর হইয়াছেন বলিয়া দাবী করিতেন।
নর্ত্তকীদ্বয়-সংক্রান্ত ঘটনাটা আমাদের নৈনী-সরোবরের শিরোভাগে অবস্থিত মন্দিরদ্বয়দর্শন-উপলক্ষে ঘটিয়াছিল। এই দুইটী মন্দির স্মরণাতীত কাল হইতে তীর্থরূপে ক্ষুদ্র রম্য ‘নৈনীতালে’র পবিত্রতা সম্পাদন করিয়া আসিয়াছে। এইস্থানে আমরা দুইজন বাইজীকে পূজায় রত দেখিলাম। পূজান্তে তাহারা আমাদের নিকট আসিল এবং আমরা ভাঙ্গা ভাঙ্গা ভাষায় তাহাদের সহিত আলাপ করিতে লাগিলাম। আমরা তাহাদিগকে নৈনীতাল সহরের কোন সম্ভ্রান্ত বংশের রমণী বলিয়া ভুল করিয়াছিলাম এবং স্বামিজী তাহাদিগকে তাড়াইয়া দিতে অস্বীকার করার উপস্থিত জনমণ্ডলীর মনোমধ্যে যে একটা আন্দোলন চলিয়াছিল তাহা তখন লক্ষ্য না করিলেও পরে জানিতে পারিয়া অতীব বিস্মিত হইয়াছিলাম। আমার যতদূর স্মরণ হয়, খেতরীর বাইজীর যে গল্প তিনি বারম্বার করিতেন তাহা প্রথমবার সম্ভবতঃ এই নৈনীতালের বাইজীদের প্রসঙ্গেই বলিয়াছিলেন। সেই খেতরীর বাইজীকে দেখিতে যাইবার নিমন্ত্রণ পাইয়া তিনি ক্রুদ্ধ হইয়াছিলেন, কিন্তু পরিশেষে অনেক অনুরোধে তথায় গমন করেন এবং তাহার সঙ্গীত শ্রবণ করেন―
১৫