ঘুরিয়া গিয়াছে; কিন্তু সর্ব্বত্রই বিশালদ্রুমরাজিচ্ছায়াবহুল। ব্যাঘ্র-ভল্লুকাদি দূরে রাখিবার জন্য সমস্ত পথ আমাদের আগে আগে মশাল ও লণ্ঠন চলিয়াছে। যতক্ষণ বেলা ছিল, আমরা গোলাপ বন, ঝরণার আশেপাশে সরু সরু পাতাওয়ালা একজাতীয় ফার্ন এবং বন্য দাড়িম্বের ঝোপে লাল লাল কুঁড়িগুলি দেখিতে দেখিতে চলিয়াছিলাম; কিন্তু নিশাগমে ইহাদের এবং হনিসাক্লের কেবল গন্ধই আমাদের অবশিষ্ট রহিল। নৈশ নিস্তব্ধতা, ক্ষীণ নক্ষত্রালোক এবং পর্বতমালার ভাবগাম্ভীর্য্য ব্যতীত অপর কিছুই উপলব্ধি করিতে না পারিলেও আমরা সানন্দে ক্রমাগত অগ্রসর হইয়া অবশেষে পাদপান্তরালে পর্বতগাত্রে অপরূপভাবে স্থাপিত একটী ডাকবাঙ্গলায় পৌঁছিলাম। স্বামিজী কিয়ৎক্ষণ পরে দলবলসহ তথায় পৌঁছিলেন। তাঁহার বদন আনন্দোৎফুল্ল, স্বীয় অতিথিগণের স্বাচ্ছন্দ্যবিধায়ক প্রত্যেক খুঁটনাটির দিকে তাঁহার পূর্ণ দৃষ্টি, আর সর্ব্বোপরি বাহিরের অপার্থিব ‘নৈশ দৃশ্যাবলীর’ কবিত্বে ভরপূর—নিজ নিজ অগ্নিকুণ্ডের পাশে উপবিষ্ট কুলিসংঘ, অশ্বগণের হ্রেষারব, অদুরস্থ ধরমশালা, তরুরাজির সন্ সন্ শব্দ এবং অরণ্যানীর গভীরভাবোদ্দীপক তমিস্রা।
প্রাতরাশের সময় আমাদের গৃহে আসিয়া কয়েক ঘণ্টা কথা-বার্ত্তায় কাটাইয়া দেওয়া স্বামিজীর পুরাতন অভ্যাস ছিল। আমাদের আলমোড়া পৌঁছিবার দিন হইতেই স্বামিজী এই অভ্যাস পুনরায় সুরু করিলেন। তখন (এবং সকল সময়েই) তিনি অতি অল্প সময় ঘুমাইতেন এবং মনে হয় তিনি যে এত প্রাতে আমাদের নিকট আসিতেন, তাহা অনেক সময় আরও সকালে সন্ন্যাসিগণের
১৭