ভবিষ্যতের এক উজ্জ্বল চিত্র-অঙ্কনে প্রবৃত্ত হইলেন এবং যিনি আমেরিকাবাসী নন, এরূপ একজন শ্রোতার দিকে ফিরিরা উক্ত জাতি কিরূপ বদান্যতার সহিত তত্রত্য আদিম অধিবাসিগণের নিমিত্ত বন্দোবস্ত করিতে প্রয়াস পাইয়াছিলেন, তদ্বিষয়ে বর্ণনা করিলেন।
হয়ত বা তিনি উল্লাসপূর্ব্বক ভারতবর্ষের অথবা মোগলবংশের ইতিহাসের সার-সঙ্কলন করিয়া দিতেন। মোগলগণের গরিমা স্বামিজী শতমুখে বর্ণনা করিতেন। এই সারা গ্রীষ্ম-ঋতুটিতে তিনি প্রায়ই মধ্যে মধ্যে থাকিয়া থাকিয়া দিল্লী ও আগ্রার বর্ণনায় প্রবৃত্ত হইতেন। একবার তিনি তাজমহলকে ‘একটা ক্ষীণালোক স্থান, তৎপরে আর একটা ক্ষীণালোক স্থান, আবার সেখানে একটী সমাধি!’—এইরূপ বর্ণনা করেন। আর একবার তিনি সাজাহানের কথা বলিতে বলিতে সহসা উৎসাহভরে বলিয়া উঠিলেন, “আহা, তিনিই মোগলকুলের ভূষণস্বরূপ ছিলেন। অমন সৌন্দর্য্যানুরাগ ও সৌন্দর্য্যবোধ ইতিহাসে আর দেখা যায় না। আবার নিজেও একজন কলাবিদ্ লোক ছিলেন। আমি তাঁহার স্বহস্তচিত্রিত একথানি পাণ্ডুলিপি দেখিয়াছি, সেখানি ভারতবর্ষের কলাসম্পদের অঙ্গ বিশেষ। কি প্রতিভা!” তিনি আকবরের প্রসঙ্গ আরো বেশী করিয়া করিতেন। আগ্রাসন্নিকটে সেকেন্দ্রার সেই গম্বুজবিহীন অনাচ্ছাদিত বাতাতপোক্ত সমাধির পাশে বসিয়া আকবরের কথা বলিতে বলিতে স্বামিজীর কণ্ঠ যেন অশ্রুগদগদ হইয়া আসিত এবং তাঁহার অন্তর্নিহিত বেদনা কাহারও বুঝিতে আর বাকি থাকিত না।
২৩