কিন্তু সর্ব্ববিধ বিশ্বজনীন ভাবও আচার্য্যদেবের হৃদয়ে উদিত হইত। একদিন তিনি চীনদেশকে জগতের কোষাগার বলিয়া বর্ণনা করিলেন, এবং বলিলেন, তত্রত্য মন্দিরগুলির দ্বারদেশের উপরিভাগে প্রাচীন বাঙ্গলালিপি খোদিত দেখিয়া তাঁহার রোমাঞ্চ হইয়াছিল। তাঁহার জনৈক শ্রোতা অসত্যপরায়ণতা উক্ত জাতির একটা সর্ব্বজন-পরিচিত দোষ বলিয়া অভিযোগ করেন—প্রাচ্য জাতিগণসম্বন্ধে পাশ্চাত্ত্যগণের কিরূপ ভাসা ভাসা জ্ঞান, এই উক্তিই তাহার জ্বলন্ত প্রমাণ। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে চীনাগণ যুক্তরাজ্যে—যেখানে তাহারা ব্যবসায়পটু লোক বলিয়া পরিচিত—অদ্ভুত বাণিজ্যসম্বন্ধীয় সাধুতার জন্য বিখ্যাত, এমন কি তাহাদের সাধুতা, পাশ্চাত্ত্যগণ উক্ত শব্দ বলিতে সাধারণতঃ যাহা বুঝিয়া থাকেন তদপেক্ষা অনেক অধিক। সুতরাং এই অভিযোগটী অযথা বর্ণনের লজ্জাকর উদাহরণস্থল হইলেও এরূপ অযথা বর্ণন ত সচরাচর যথেষ্ট পরিমাণেই ঘটিয়া থাকে। কিন্তু স্বামিজী কোনমতেই ইহার নামগন্ধ পর্য্যন্ত সহ্য করিলেন না। তিনি উত্তেজিত হইয়া বলিতে লাগিবেন, “অসত্যপরায়ণতা! সামাজিক কঠোরতা! এগুলি অত্যন্ত আপেক্ষিক শব্দ ব্যতীত আর কি? বিশেষতঃ অসত্যপরায়ণতার কথা ধরিতে গেলে যদি মানুষকে বিশ্বাস না করিত, তাহা হইলে বাণিজ্য বা সমাজ বা অন্য সর্ব্ববিধ সংহতি একটী দিনও টিকিতে পারিত কি? শিষ্টাচারের খাতিরে অসত্যপরায়ণ হইতে হয়, বলিতেছ? তাহা হইলে, পাশ্চাত্ত্যগণের এ বিষয়ে যে ধারণা তাহার সহিত ইহার পার্থক্য কোথায়? ইংরেজ কি সকল সময়েই যথাকথিত স্থানে সুখবোধ এবং যথাকথিত স্থানে দুঃখবোধ
২৪