সকলেই ব্রাহ্মণকুলে না জন্মিয়া যে ক্ষত্রিকুলে উৎপন্ন হইয়াছিলেন, সেটী ঐতিহাসিক উন্নতির এক গভীর নিয়মেরই ফলস্বরূপ। এবং এই আপাত-বিসংবাদী সিদ্ধান্তে ব্যাখ্যাত হইবামাত্র বৌদ্ধধর্ম্ম এক জাতিভেদধ্বংসী সূত্ররূপে প্রতীয়মান হইত—‘ক্ষত্রিয়কুল কর্তৃক উদ্ভাবিত ধর্ম্ম’ ব্রাহ্মণ্যধর্ম্মের সাংঘাতিক প্রতিপক্ষস্বরূপ হইয়া দাড়াইত।”
বুদ্ধ সম্বন্ধে স্বামিজী যে সময় কথা কহিতেছিলেন, সেটী এক মাহেন্দ্রক্ষণ; কারণ জনৈক শ্রোত্রী স্বামিজীর একটা কথা হইতে বৌদ্ধধর্ম্মের ব্রাহ্মণ্য-প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবটিই তাঁহার মনোগত ভাব, এই ভ্রমাত্মক সিদ্ধান্ত করিয়া বলিলেন, “স্বামিজী, আমি জানিতাম না যে আপনি বৌদ্ধ!” উক্ত নামশ্রবণে তাঁহার মুখমণ্ডল দিব্যভাবে উদ্ভাসিত হইয়া উঠিল। প্রশ্নকর্ত্রীর দিকে ফিরিয়া তিনি বলিলেন, “আমি বুদ্ধের দাসানুদাসগণের দাস। তাঁহার মত কেহ কখনও জন্মিয়াছেন কি? স্বয়ং ভগবান হইয়াও তিনি নিজের জন্য একটি কাজও করেন নাই—আর কি হৃদয়! সমস্ত জগৎটাকে তিনি ক্রোড়ে টানিয়া লইয়াছেন। এত দয়া যে, রাজপুত্র এবং সাধু হইয়াও একটি ছাগশিশুকে বাঁচাইবার জন্য প্রাণ দিতে উদ্যত! এত প্রেম যে, এক ব্যাঘ্রীর ক্ষুধাতৃপ্তির জন্য স্বীয় শরীর পর্য্যন্ত দান করিয়াছিলেন এবং আশ্রয়দাতা এক চণ্ডালের জন্য আত্মবলি দিয়া তাহাকে আশীর্ব্বাদ করিয়াছিলেন! আর আমার বাল্যকালে এক দিন তিনি আমার গৃহে আসিয়াছিলেন এবং আমি তাঁহার পাদমূলে সাষ্টাঙ্গে প্রণত হইয়াছিলাম! কারণ আমি জানিয়াছিলাম যে ভগবান বুদ্ধই স্বয়ং আসিয়াছেন!”
২৭