পাতা:স্বামিজীর সহিত হিমালয়ে - ভগিনী নিবেদিতা (১৯৫১).pdf/৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
স্বামিজীর সহিত হিমালয়ে

বা ঈশ্বরের প্রতিমা নহে, পরন্তু তিনিই এই জগৎ এবং যাহা কিছু আছে সব।

 সারা গ্রীষ্মঋতুটি ধরিয়া তিনি কখনও কখনও আমাদের নিকট অনেকক্ষণ বসিয়া গল্প করিতেন এবং হিন্দুধর্ম্মের সেই সকল ছেলেভুলান উপকথা বলিতেন, যাহাদের উদ্দেশ্য আদৌ আমাদের শিশুমহলে প্রচলিত গল্পগুলির মত নহে, কিন্তু অনেক বেশী—কেন না প্রাচীন গ্রীকজগতের পৌরাণিক উপকথাগুলির ন্যায় তাহারা চরিত্রগঠনের সহায়ক। ইহাদের মধ্যে শুকের আখ্যানটি আমার সর্ব্বাপেক্ষা ভাল লাগিয়াছিল। একদিন সন্ধ্যাকালে যখন আমরা ইহা প্রথম শুনিয়াছিলাম, তখন তুষারপর্ব্বতরূপী মহাদেব এবং আলমোড়ার ঊষর দৃশ্যাবলী আমাদের দৃষ্টিপথ অধিকার করিয়াছিল।

 পরমহংসকুলাগ্রণী শুরু পঞ্চদশ বৎসর ভূমিষ্ঠ হইতে চাহেন নাই; কারণ তিনি জানিতেন যে, তাঁহার জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই তাঁহার জননীর মৃত্যু ঘটবে।[] তখন তাঁহার পিতা জগন্মাতা উমার কৃপাভিক্ষা করিলেন। জগন্মাতা ক্রমাগত গর্ভস্থ ঋষির সম্মুখ


  1. শুকোপাখ্যানের এইরূপ বর্ণনায় পাঠকের খট্‌কা লাগিতে পারে। কিন্তু আমাদের মনে হয়, সিষ্টার নিবেদিতা এখানে ইচ্ছাপূর্ব্বক এইরূপেই ঘটনাগুলিকে বর্ণনা করিয়াছেন–হয় ইহাকে অধিকতর স্বাভাবিকভাবে অঙ্কিত করিবার জন্য, নয়ত শুকের হৃদয়ে যে গভীর প্রেম বিদ্যমান ছিল তাহারই আভাস দিবার জন্য; কারণ শুক জানিতেন যে জন্মিবামাত্রই তিনি পিতামাতা, পরিজন, গৃহ এবং সর্ব্বস্ব ভগবংপ্রেমের উদ্দেশ্যে বিসর্জ্জন দিবেন এবং তাহাতে সকলের বিশেষতঃ তাঁহার জননীর মৃত্যুযন্ত্রণা উপস্থিত হইবে। আখায়িকাটির শেষাংশ পড়িবার সময়ও পাঠক এই বিষয়টা স্মরণ রাখিবেন।

৩০