পাতা:স্বামিজীর সহিত হিমালয়ে - ভগিনী নিবেদিতা (১৯৫১).pdf/৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আলমোড়ায় প্রাতঃকালীন কথোপকথন

আধ্যাত্মিক অর্থ এবং শুকের মাহাত্ম্য-দ্যোতক এই শিববাক্য দণ্ডায়মান হইয়া উচ্চারণ করিতে করিতে তাঁহার মুখে যে অপূর্ব্ব ভাবের বিকাশ হইয়াছিল, তিনি যেন আনন্দ-সমুদ্রের সুদূর তলদেশ পর্যন্ত নিরীক্ষণ করিতেছিলেন—তাহা আমি কখনই ভুলিতে পারিব না।

 আলমোড়ায় অবস্থানকালে আর একদিন স্বামিজী হিন্দু-সভ্যতার চিরন্তন উপকূলে আধুনিক চিন্তাতরঙ্গরাজির বহুদুরব্যাপী প্লাবনের প্রথম ফলস্বরূপ বঙ্গদেশে যে সকল উদারহৃদয় মহাপুরুষের আবির্ভাব হইয়াছিল, তাঁহাদিগের কথা বলিয়াছিলেন। রাজা রামমোহন রায়ের কথা আমরা ইতঃপূর্ব্বেই নৈনীতালে তাঁহার মুখে শুনিয়াছিলাম। এক্ষণে বিদ্যাসাগর মহাশয় সম্বন্ধে তিনি সাগ্রহে বলিলেন, “উত্তর ভারতে আমার বয়সের এমন একজন লোক নাই, যাহার উপর তাঁহার ছায়া না পড়িয়াছে!” এই দুই ব্যক্তি এবং শ্রীরামকৃষ্ণ যে একই স্থানে মাত্র কয়েক ক্রোশের ব্যবধানে জন্মিয়াছেন, ইহা মনে হইলে তিনি যারপরনাই আনন্দ অনুভব করিতেন।

 স্বামিজী এক্ষণে বিদ্যাসাগর মহাশয়কে আমাদের নিকট ‘বিধবাবিবাহ-প্ররর্তনকারী ও বহুবিবাহ-রোধকারী মহাবীর’ বলিয়া উল্লেখ করিলেন। কিন্তু তৎসম্বন্বন্ধে তাঁহার প্রিয় গল্প ছিল সেই দিনকার ঘটনাটী—যে দিন তিনি ব্যবস্থাপক সভা হইতে তাদৃশ স্থানবিশেষে সাহেবী পরিচ্ছদ পরিধান করা বিধেয় কি না, এই বিষয়ে চিন্তা করিতে করিতে গৃহে ফিরিলেন। এমন সময়ে তিনি দেখিলেন যে, ধীরে সুস্থে এবং গুরুগম্ভীর চালে গৃহগমনরত

৩৩