এক স্থূলকায় মোগলের নিকট এক ব্যক্তি দ্রুতপদে আসিয়া সংবাদ দিল, “মহাশয়, আপনার বাড়ীতে আগুন লাগিয়াছে।” এই সংবাদে মোগলপ্রবরের গতির লেশমাত্রও হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটিল না; ইহা দেখিয়া সংবাদবাহক ইঙ্গিতে ঈষৎ বিজ্ঞজনোচিত বিস্ময় জানাইয়াছিল। তৎক্ষণাৎ তাঁহার প্রভু সক্রোধে তাহার দিকে ফিরিয়া কহিলেন, “পাজি! খান করেক বাখারি পুড়িয়া যাইতেছে বলিয়া তুই আমায় আমার বাপ-পিতামহের চাল ছাড়িয়া দিতে বলিস্!” এবং বিদ্যাসাগর মহাশয়ও তাঁহার পশ্চাতে আসিতে আসিতে দৃঢ় সঙ্কল্প করিলেন যে, ধুতি-চাদর এবং চটিজুতা কোনক্রমে ছাড়া হইবে না; ফলে দরবার যাত্রাকালে একটা জামা ও একজোড়া জুতা পর্যন্ত পরিলেন না।
“বালবিধবাগণের বিবাহ চলিতে পারে কি না?”—মাতার এইরূপ সাগ্রহ প্রশ্নে বিদ্যাসাগরের শাস্ত্রপাঠার্থ এক মাসের জন্য নির্জ্জন গমনের চিত্রটি খুব চিত্তাকর্ষক হইয়াছিল। নির্জ্জন বাসের পর তিনি “শাস্ত্র এরূপ পুনর্বিবাহের প্রতিপক্ষ নহেন”—এই নত প্রকাশ করিয়া এতদ্বিষয়ে পণ্ডিতগণের স্বাক্ষরযুক্ত সম্মতি-পত্র সংগ্রহ করিলেন। পরে কতিপয় দেশীয় রাজা ইহার বিপক্ষে দণ্ডায়মান হওয়ায় পণ্ডিতগণ নিজ নিজ স্বাক্ষর প্রত্যাহার করিলেন; সুতরাং সরকার বাহাদুর এই আন্দোলনের স্বপক্ষে সাহায্য করিতে কৃতসঙ্কল্প না হইলে ইহা কখনই আইনরূপে পরিণত হইত না। স্বামিজী আরও বলিলেন, “আর আজকাল এই সমস্যা সামাজিক ভিত্তির উপর উপস্থাপিত না হইয়া বরং এক অর্থনীতিসংক্রান্ত ব্যাপার হইয়া দাড়াইয়াছে।”
৩৪