পাতা:স্বামিজীর সহিত হিমালয়ে - ভগিনী নিবেদিতা (১৯৫১).pdf/৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আলমোড়ায় প্রাতঃকালীন কথোপকথন

 যে ব্যক্তি কেবল নৈতিক বলে বহুবিবাহকে হেয় প্রতিপন্ন করিতে সক্ষম হইয়াছিলেন, তিনি যে প্রভূতআধ্যাত্মিক শক্তিসম্পন্ন ছিলেন, তাহা আমরা অনুধাবন করিতে পারিলাম এবং যখন শুনিলাম যে, এই মহাপুরুষ ১৮৬৪ খৃষ্টাব্দের দুর্ভিক্ষে, অনাহারে ও রোগে এক লক্ষ চল্লিশ হাজার লোক কালগ্রাসে পতিত হওয়ায় মর্ম্মাহত হইয়া ‘আর ভগবান মানি না’ বলিয়া সম্পূর্ণরূপে অজ্ঞেয়বাদের চিন্তাস্রোতে গা ঢালিয়া দিয়াছিলেন, তখন ‘পোষাকী’ মতবাদের উপর ভারতবাসীর কিরূপ অনাস্থা, তাহা সম্যক উপলব্ধি করিয়া আমরা যারপরনাই বিস্ময়াভিভূত হইয়াছিলাম।

 বাঙ্গালার আচার্য্যশ্রেণীর মধ্যে একজনের নাম স্বামিজী ইঁহার নামের সহিত উল্লেখ করিয়াছিলেন। তিনি ডেভিড হেয়ার—সেই বৃদ্ধ স্কটল্যাণ্ডবাসী নিরীশ্বরবাদী, মৃত্যুর পর যাঁহাকে কলিকাতার যাজকবৃন্দ ঈশাহীজনোচিত সমাধিদানে অস্বীকার করিয়া-ছিলেন। তিনি বিসূচিকারোগাক্রান্ত এক পুরাতন ছাত্রের শুশ্রূষা করিতে করিতে মৃত্যুমুখে পতিত হন। তাঁহার নিজ ছাত্রগণ তাঁহার মৃতদেহ বহন করিয়া এক সমতল ভূমিখণ্ডে সমাধিস্থ করিল এবং উক্ত সমাধি তাহাদের নিকট এক তীর্থে পরিণত হইল। সেই স্থানই আজ শিক্ষার কেন্দ্রস্বরূপ হইয়া কলেজস্কোয়ার নামে অভিহিত হইয়াছে, আর তাঁহার বিদ্যালয়ও আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্গীভূত এবং আজিও কলিকাতার ছাত্রবৃন্দ তীর্থের ন্যায় তাঁহার সমাধিস্থান-দর্শনে গমন করিয়া থাকে।

 এইদিন আমরা কথাবার্তার মধ্যে কোন সুযোগে স্বামিজীকে জেরা করিয়া বসিলাম—ঈশাহীধর্ম তাঁহার নিজের উপর প্রভাব

৩৫