তাহা দেখিয়া ঠিক এইরূপ ভীব্র বিস্ময়ের সহিত তিনি বলিয়া উঠিয়াছিলেন, “দেখ, প্রত্যেক ক্ষুদ্র শাসক এবং কর্ম্মচারীর জন্য ছুটির ও বিশ্রামের সময় নির্দিষ্ট আছে। আর সনাতন নিয়ন্তা ঈশ্বরই বুঝি শুধু চিরকাল বিচারাসনেই বসিয়া থাকিবেন, তাঁহার আর কখনও ছুটি মিলিবে না!”
কিন্তু এই প্রথম কয় ঘণ্টা স্বামিজী তাঁহার বিয়োগদুঃখে অটল রহিলেন এবং আমাদের সহিত বসিয়া ধীরভাবে নানা কথা কহিতে লাগিলেন। সেদিন প্রাতঃকালে তিনি ক্রমাগত ভক্তির পরিণত ফলস্বরূপ যে ত্যাগ তাহারই কথা বলিতে লাগিলেন—কিরূপে প্রগাঢ় ভগবৎ-প্রেমের খরতর প্রবাহ মনুষ্যগণকে ব্যক্তিত্বের সীমানা ছাড়াইয়া বহুদূর ভাসাইয়া লইয়া যাইলেও আবার তাহাকে এমন এক স্থানে ছাড়িয়া দিয়া যায়, যেখানে সে ব্যক্তিত্বের মধুর পাশবন্ধন হইতে নিষ্কৃতি পাইবার জন্য ছট্ফট্ করে।
সেদিন সকালের ত্যাগসম্বন্ধীয় উপদেশসমূহ শ্রোতৃবর্গের মধ্যে এক জনের নিকট অতি কঠিন বলিয়া বোধ হইল এবং তিনি পুনরার আসিলে উক্ত মহিলা তাঁহাকে বলিলেন, “আমার ধারণা, অনাসক্ত হইয়া ভালবাসায় কোনরূপ দুঃখোৎপত্তির সম্ভাবনা নাই এবং ইহা স্বয়ংই সাধ্যস্বরূপ।”
হঠাৎ গভীরভাব ধারণ করিয়া স্বামিজী তাঁহার দিকে ফিরিয়া বলিতে লাগিলেন, “এই যে ত্যাগ-রহিত ভক্তির কথা বলিতেছি, এটা কি? ইহা অত্যন্ত হানিকর!” এবং প্রকৃতপক্ষে অনাসক্ত হইতে হইলে কিরূপ কঠোর আত্মসংযমের অভ্যাস আবশ্যক, কিরূপে স্বার্থপর উদ্দেশ্যগুলির আবরণ উন্মোচন করা চাই এবং অতি কুসুম-
৪৪