অনেক মাস পরে শ্রোতৃগণের মধ্যে একজন স্বামিজীর মুখে পুনরায় এই দর্শনটীর কথা শুনেন এবং তাঁহার (স্বামিজীর) চিন্তাপ্রণালীর ঘনিষ্টতর পরিচয় পাওয়ায় এই শিষ্যের মনে হইয়াছিল যে, অপরোক্ষ অনুভূতি হিসাবে ইহার মূল্য খুব বেশী। অতীন্দ্রিয় জগতে আধ্যাত্মিক অনুভূতিসকলের যে একটা পারম্পর্য্য থাকে এবং যুগ-যুগান্তরের ব্যবধান ও জীবনমূত্রের মুহুর্মুহুঃ বিচ্ছেদ সত্ত্বেও যে তাহার ব্যত্যয় হয় না, হয়ত এই দর্শন স্বামিজীর নিকট ইহাই সূচিত করিয়াছিল। যদি তাহাই হয়, তবে কেহই তাঁহার নিকট এ বিষয়ের বিশদ বর্ণনা আশা করিতে পারেন না। কেন না, যে সকল লোক দিনরাত নিজ নিজ অতীত জীবনের কল্পনা লইয়াই ব্যস্ত থাকে, স্বামিজী তাহাদিগকে চিরকাল অত্যন্ত হীনবুদ্ধি জ্ঞান করিতেন। কিন্তু এই দ্বিতীয় বার গল্পটা-উল্লেখের সময় তিনি ইহার একটু আভাস এক সম্পূর্ণ নূতন দিক হইতে দিয়াছিলেন।
তিনি বলিতেছিলেন, “শঙ্করাচার্য্য বেদের ধ্বনিটীকে ঠিক ধরিতে পারিয়াছিলেন, উহাই আমাদের জাতীয় তান। বলিতে কি, আমার চিরন্তন ধারণা—” বলিতে বলিতে হঠাৎ তাঁহার কণ্ঠস্বর যেন আবেগময় হইয়া আসিল এবং দৃষ্টি যেন সুদূরে ন্যস্ত হইল—“আমার চিরন্তন ধারণা এই যে, তাঁহারও শৈশবে আমার মত কোন এক অলৌকিক দর্শনলাভ নিশ্চয়ই ঘটিয়াছিল এবং তিনি ঐরূপে সেই প্রাচীন তানকে ধ্বংসমুখ হইতে ফিরাইয়া আনিয়াছিলেন। ইহা সত্য হউক বা না হউক, কিন্তু তাঁহার সমগ্র জীবনের কার্য্যই ঐ—বেদ এবং উপনিষৎসমূহের সৌন্দর্য্যের স্পন্দন মাত্র।”
৫৮