অবশ্য এই প্রকারের উক্তিগুলি সম্পূর্ণরূপে কল্পনামূলক এবং আবেগে কখনও কখনও তিনি হঠাৎ যেসকল মত প্রকাশ করিয়া ফেলিতেন, তৎসম্বন্ধে কেহ মনে পড়াইয়া দিলে তিনি নিজেও তাহা আদৌ গ্রাহ্য করিতে পারিতেন না। কিন্তু অন্যের নিকট সেই মতগুলি অনেক সময় মূল্যবান বলিয়াই বিবেচিত হইত।
একবার সুদুর পাশ্চাত্ত্যে তাঁহার ভক্তগণের মধ্যে একজন উৎসাহভরে বলিয়াছিলেন, “বিবেকানন্দ যদি সর্ব্ববিধ বন্ধনের অপনোদক না হন, তবে তিনি কি আর হইলেন!” এই দিনের একটী সামান্য ঘটনাতে কথাগুলি মনে পড়িল। পঞ্জাব-প্রবেশের পর কোন এক ষ্টেসনে তিনি এক মুসলমান খাবারওয়ালাকে ডাকিয়া তাহার হাত হইতে খাবার কিনিয়া খাইয়াছিলেন।
রাওলপিণ্ডি হইতে মরী পর্য্যন্ত আমরা টঙ্গায় যাইলাম এবং কাশ্মীরযাত্রার পূর্ব্বে তথায় কয়েক দিন অতিবাহিত করিলাম। এইখানে স্বামিজী এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, যদি তিনি প্রাচীনপন্থিগণকে—কোন ইউরোপীয়কে গুরুভাইরূপে বা স্ত্রীশিক্ষা-বিষয়ে প্রবর্ত্তকরূপে গ্রহণ করাইতে আদৌ চেষ্টা করেন, তাহা হইলে তাহা বাঙ্গালা দেশে করাই ভাল। পঞ্জাবে বিদেশীয়দিগের প্রতি অবিশ্বাস এত প্রবল যে, তথায় এরূপ কোন কার্য্যের সফলতার সম্ভাবনা নাই। মধ্যে মধ্যে এই সমস্যাটা তাঁহার বিশেষ মনোযোগ আকর্ষণ করিত এবং তিনি কখনও কখনও বলিতেন যে, বাঙ্গালীরা রাজনীতিবিষয়ে ইংরেজ-প্রতিযোগী, অথচ তাহাদের মধ্যে পরস্পর ভালবাসা ও বিশ্বাসের একটা স্বাভাবিক প্রবৃত্তি রহিয়াছে; ইহা আপাতবিরুদ্ধ হইলেও একটা সত্য ঘটনা।
৫৯