পাতা:স্বামিজীর সহিত হিমালয়ে - ভগিনী নিবেদিতা (১৯৫১).pdf/৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বারামুল্লার পথে

স্বামিজী কঠোর তপ্যাকে ‘বর্ব্বরতা’ বলিয়া তীব্র সমালোচনা করিতে লাগিলেন। ভারতবর্ষের এই এক বিশেষত্ব যে, শুধু ধর্ম্মজীবনই সম্পূর্ণরূপে নিজ অবস্থাসম্বন্ধে সচেতন এবং উহাই সর্ব্বাঙ্গীন স্ফুর্ত্তিলাভ করিয়াছে। এই লোকগুলি সম্ভবতঃ যতটুকু কষ্ট স্বীকার করিতেছিলেন, ঠিক ততটুকু কষ্টই অন্যান্য দেশে লোকে ব্যবসায়ে বা কারবারে, এমন কি খেলাতেও উন্নতিলাভকল্পে স্বীকার করিবে। কিন্তু যাত্রিগণ তাহাদের আদর্শের নামে ধীরে ধীরে ক্রোশের পর ক্রোশ পথ অতিবাহন করিতেছে, এই দৃশ্যে তাঁহার মনে কষ্টকর স্মৃতি-পরম্পরার উদয় হইল এবং মানব-সাধারণের পক্ষ হইতে তিনি ধর্ম্মের উৎপীড়নে অধীর হইয়া উঠিলেন। তৎপরে আবার ঐ ভাব যেমন হঠাৎ আসিয়াছিল, তেমনই হঠাৎ চলিয়া গেল এবং তাহার পরিবর্তে এই ‘বর্ব্বরতা’ না থাকিলে যে বিলাস আসিয়া মানুষের সমুদয় মনুষ্যত্ব অপহরণ করিত, এই ধারণা ঠিক তেমনই দৃঢ়তার সহিত উল্লিখিত হইল।

 সেদিন রাত্রে আমরা উরীর ডাক-বাঙ্গলায় অবস্থান করা স্থির করিলাম এবং গোধূলির সময় সকলে ক্ষেত ও বাজার বেড়াইয়া আসিলাম। আহা! কি সুন্দর স্থানটী! চলিবার রাস্তার উপরেই একটী ক্ষুদ্র মাটির কেল্লা—ঠিক ইউরোপীয় ফিউড্যাল[] ছাঁচের—এবং অব্যবহিত পরেই উন্মুক্ত আকাশতলে ক্রমোচ্চভাবে সাজান ক্ষেত ও পাহাড়ের শ্রেণী। নদীর উপরে রাস্তার গায়েই বাজারখানি এবং আমরা যে পথ দিয়া ডাকবাঙ্গলায় ফিরিয়া


  1. Feudal—মধ্যযুগে লোকে জমিদারদের নিকট হইতে ‘যুদ্ধকালে সৈন্য-সাহায্য করিব’ এই সর্ত্তে জমি ইজারা লইত, তৎসম্বন্ধীয়।

৬৫