পাতা:স্বামিজীর সহিত হিমালয়ে - ভগিনী নিবেদিতা (১৯৫১).pdf/৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কাশ্মীর উপত্যকা

ভ্রমণের পর আমরা এক বিস্তৃত গোচারণ-ভূমির মধ্যস্থলে অবস্থিত একটী প্রকাণ্ড চেনার গাছের নিকট উপস্থিত হইলাম। সত্য সত্যই দেখিলাম, যেন এই গাছের কোটরে প্রবাদোক্ত বিশটা গরু স্থান পাইতে পারে! স্বামিজী কিরূপে ইহাকে এক সাধু-নিবাসের উপযোগী করিয়া লওয়া যাইতে পারে, এই স্থাপত্য-বিষয়ক আলোচনায় ব্যাপৃত হইলেন। বাস্তবিকই এই সজীব বৃক্ষটীর কোটরে একটা ক্ষুদ্র কুটীর নির্ম্মিত হইতে পারিত; তৎপরে তিনি ধ্যানের কথা বলিতে লাগিলেন; ফলে দাঁড়াইল এই যে, ভবিষ্যতে চেনার গাছ দেখিলেই ঐ কথার স্মৃতি উহাকে পবিত্রতায় মণ্ডিত করিয়া দিবে!

 তাঁহার সহিত আমরা নিকটস্থ গোলাবাড়ীতে প্রবেশ করিলাম। তথায় দেখিলাম, তরুতলে বসিয়া এক পরম সুশ্রী বর্ষীয়সী রমণী। তাঁহার মস্তকে কাশ্মীরী-স্ত্রী-সুলভ লাল টুপী এবং শ্বেত অবগুণ্ঠন। তিনি বসিয়া পশম হইতে সূতা কাটিতেছিলেন এবং তাঁহার চারি পাশে তাঁহার দুই পুত্রবধূ এবং তাঁহাদের ছেলেপিলেরা তাঁহাকে সাহায্য করিতেছেন। স্বামিজী পূর্ব্ব শরৎ-ঋতুতে আর একবার এই গোলাবাড়ীতে আসিয়াছিলেন এবং তদবধি এই স্ত্রীলোকটীর স্বধর্ম্মে আস্থা এবং গৌরব-বোধের কথা অনেকবার বলিয়াছিলেন। সেবার তিনি জল খাইতে চাহিয়াছিলেন এবং উক্তা স্ত্রীলোকটাও তৎক্ষণাৎ উহা তাঁহাকে দিয়াছিলেন। তৎপরে বিদায় লইবার পূর্ব্বে তিনি তাঁহাকে ধীরভাবে জিজ্ঞাসা করিয়াছিলেন, “মা, আপনি কোন্ ধর্ম্মাবলম্বিনী?” সগৌরবে জয়োল্লাসিত উচ্চ কণ্ঠে বৃদ্ধা উত্তর দিয়াছিলেন, “ঈশ্বরকে ধন্যবাদ! প্রভুর কৃপায় আমি মুসলমানী!” এক্ষণে এই মুসলমান

৬৯