পরিবার সকলে মিলিয়া স্বামিজীকে পুরাতন বন্ধুরূপে অভ্যর্থনা করিলেন এবং তিনি যে বন্ধুগণকে সঙ্গে আসিয়াছিলেন তাঁহাদের প্রতিও সর্ব্ববিধ সৌজ্য-প্রকাশে রত হইলেন। শ্রীনগর পৌছিতে দুই-তিন দিন লাগিয়াছিল এবং একদিন সন্ধ্যাকালে আহারের পূর্ব্বে ক্ষেতের উপর বেড়াইতে বেড়াইতে একজন (তিনি কালীঘাট দর্শন করিয়াছিলেন) আচার্য্যদেবের নিকট অভিযোগ করিলেন যে, সেখানকার ভক্তির অতিরিক্ত উচ্ছ্বাস তাঁহার বিসদৃশ বোধ হইয়াছিল এবং বলিয়া উঠিলেন, “প্রতিমার সম্মুখে তাহারা ভূমিতে সাষ্টাঙ্গ হয় কেন?” স্বামিজী একটা তিলের ক্ষেতের দিকে অঙ্গুলি নির্দ্দেশ করিয়া (তাঁহার মতে ইংলণ্ডের dill নামক শস্যের উহা হইতেই উৎপত্তি) তিল আর্য্যগণের সর্ব্বাপেক্ষা প্রাচীন তৈলবাহী বীজ, এই কথা বলিতেছিলেন! কিন্তু এই প্রশ্নে তিনি হস্তস্থিত ক্ষুদ্র নীল ফুলটাকে ফেলিয়া দিলেন, পরে স্থিরভাবে দাঁড়াইয়া প্রশান্ত গম্ভীরস্বরে বলিলেন, “এই পর্ব্বতমালার সম্মুখে সাষ্টাঙ্গ হওয়া আর সেই প্রতিমার সম্মুখে সাষ্টাঙ্গ হওয়া, একই কথা নয় কি?”
আচার্য্যদেব আমাদিগের নিকট প্রতিশ্রুত হইয়াছিলেন যে, গ্রীষ্মাবসানের পূর্ব্বেই তিনি আমাদিগকে কোন শান্তিপূর্ণ স্থানে লইয়া গিয়া ধ্যান শিক্ষা দিবেন। আমাদের চিঠিপত্র বহু দিন ধরিয়া জমিতেছিল; সেগুলি আনিবার নিমিত্ত আমাদিগকে এক্ষণে শ্রীনগর যাইতে হইবে এবং অবকাশটী কিরূপে কাটাইতে হইবে, এ বিষয়ে প্রশ্ন উঠিল। নির্দ্ধারিত হইল যে, আমরা প্রথমে দেশটী দেখিব এবং তৎপরে নির্জ্জনবাস করিব।
শ্রীনগরের প্রথম রজনীতে আমরা কতিপয় বাঙ্গালী রাজকর্ম্ম-
৭০