চারীর গৃহে ভোজন করিয়াছিলাম এবং নানা কথার প্রসঙ্গে পাশ্চাত্ত্য অভ্যাগতগণের মধ্যে একজন মত প্রকাশ করিলেন যে, প্রত্যেক জাতির ইতিহাস কতকগুলি আদর্শের উদাহরণ এবং বিকাশস্বরূপ; উক্ত জাতির সকল লোকেরই সেইগুলিকে দৃঢ়ভাবে ধরিয়া থাকা উচিত। আমরা এই দেখিয়া কৌতুক অনুভব করিলাম যে, উপস্থিত হিন্দুগণ ইহাতে আপত্তি উত্থাপন করিলেন। তাঁহাদের পক্ষে ইহা ত স্পষ্টই একটী বন্ধন এবং মানবমন কখনই চিরকাল ইহার অধীন হইয়া থাকিতে পারে না। উক্ত মতের বন্ধনাত্মক অংশের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হইয়া তাঁহারা সমগ্র ভাবটীর প্রতিই অবিচার করিলেন বলিয়া মনে হইল। অবশেষে স্বামিজী মধ্যস্থ হইয়া বলিলেন, “তোমরা বোধ হয় স্বীকার করিবে যে, মানবপ্রকৃতির ক্ষেত্রে যদি কোন চূড়ান্ত শ্রেণীভাগসূত্র থাকে ত উহা আধ্যাত্মিক; আধিভৌতিক বা ভৌগোলিক নহে। প্রণালী হিসাবে এই ভাবগত সাদৃশ্যগ্রহণকে একেদেশবর্ত্তিতামূলক সাদৃশ্যগ্রহণ অপেক্ষা চিরস্থায়ী করা যায়।” এবং তৎপরে তিনি আমাদের সকলেরই পরিচিত দুই জনের কথার উল্লেখ করিলেন; তন্মধ্যে একজনকে তিনি জীবনে যত ঈশাহী দেখিয়াছেন তাঁহাদের মধ্যে আদর্শস্থানীয় বলিয়া বরাবর মনে করিতেন অথচ তিনি একজন বঙ্গরমণী এবং আর একজনের জন্মভূমি পাশ্চাত্ত্যে; কিন্তু তিনি বলিতেন যে ঐ ব্যক্তি তাঁহার (স্বামিজীর) অপেক্ষাও ভাল হিন্দু। সব দিক ভাবিয়া দেখিলে, এ অবস্থায় ইহাই সর্ব্বাপেক্ষা বাঞ্ছনীয় ছিল না কি যে, উভয়েই প্রত্যেকে পরস্পরের দেশে জন্মিয়া নিজ নিজ আদর্শের যথাসম্ভব প্রসার বিধান করেন?
৭১