পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (পঞ্চম খণ্ড).pdf/১৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

છે ૨૨ স্বামীজীর বাণী ও রচনা অধ্যয়ন করিয়া থাকেন, তাহারা জানেন-এ অভিযোগ মোটেই সত্য নহে। প্রত্যেক উপনিষদেই অনুসন্ধান করিলে যথেষ্ট ভক্তির কথা পাওয়া যায়। তবে অন্যান্য অনেক বিষয়, যাহা পরবর্তী কালে পুরাণ ও স্মৃতিসমূহে বিশেষরূপে পরিণত হইয় ফলপুষ্পশোভিত মহীরুহের আকার ধারণ করিয়াছে, উপনিষদে সেগুলি মাত্র বীজভাবে বর্তমান । উপনিষদে যেন উহার চিত্রের প্রথম রেখাপাত অথবা কাঠামোরূপে বর্তমান। কোন না কোন পুরাণে ঐ চিত্রগুলি পরিস্ফুট করা হইয়াছে, কঙ্কালসমূহে মাংস-শোণিত সংযুক্ত হইয়াছে। কিন্তু এমন কোন সুপরিণত ভারতীয় আদর্শ নাই, যাহার বীজ সেই সর্বভাবের খনিস্বরূপ উপনিষদে না পাওয়া যায়। ভালভাবে উপনিষদের জ্ঞান অর্জন করেন নাই, এরূপ কয়েকজন ব্যক্তি প্রমাণ করিবার হাস্যাম্পদ চেষ্টা করিয়াছেন যে, ভক্তিবাদ বিদেশাগত ; কিন্তু তোমরা সকলেই জানো, তাহাদের সমুদয় চেষ্টা বিফল হইয়াছে। তোমাদের যতটুকু ভক্তির প্রয়োজন, তার সবই "উপনিষদের কথা কি, সংহিতাতেই রহিয়াছে—উপাসনা প্রেম ভক্তিতত্ত্বের যাহা কিছু আবশ্বক, সবই রহিয়াছে ; কেবল ভক্তির আদর্শ উচ্চ হইতে উচ্চতর হইতেছে। সংহিতাভাগে স্থানে স্থানে ভীতি-প্রস্থত ধর্মের চিহ্ন পাওয়া যায় । সংহিতাভাগে স্থানে স্থানে দেখা যায়, উপাসক –বরুণ বা অন্য কোন দেবতার সম্মুখে ভয়ে কঁাপিতেছে ; স্থানে স্থানে দেখা যায়, তাহারা নিজদিগকে পাপী ভাবিয়া অতিশয় যন্ত্রণা পাইতেছে ; কিন্তু উপনিষদে এ-সকল বর্ণনার স্থান নাই। উপনিষদে ভয়ের ধর্ম নাই ; উপনিষদের ধর্ম—প্রেমের, উপনিষদের ধর্ম—জ্ঞানের । এই উপনিষদসমূহই আমাদের শাস্ত্র। এইগুলি বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যাত হইয়াছে । আর আমি তোমাদিগকে পুর্বেই বলিয়াছি, পরবর্তী পৌরাণিক শাস্ত্র ও বেদের মধ্যে যেখানেই প্রভেদ লক্ষিত হইবে, সেখানেই পুরাণের মত অগ্রাহ করিয়া বেদের মত গ্রহণ করিতে হইবে। কিন্তু কার্যত: দেখিতে পাই, আমরা শতকরা নব্বই জন পৌরাণিক আর বাকি শতকরা দশ জন বৈদিক—তাহাও হয় কি না সন্দেহ । আরও দেখিতে পাই, আমাদের মধ্যে নানাবিধ অত্যন্ত বিরোধী আচার বিদ্যমান—দেখিতে পাই, আমাদের সমাজে এমন সব ধর্মমত রহিয়াছে, যেগুলির কোন প্রমাণ হিন্দুদের শাস্ত্ৰে’নাই। আর শাস্ত্রপাঠে আমরা দেখিতে পাই এবং দেখিয়া আশ্চর্য হই যে, আমাদের দেশে অনেক স্থলে এমন সব প্রথা প্রচলিত আছে, যেগুলির প্রমাণ বেদ স্বতি