পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (পঞ্চম খণ্ড).pdf/১৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

➢ቕU\r স্বামীজীর বাণী ও রচন। চকিত দর্শন লাভ করে এবং যতই ঘা খায়, ততই সেই নিম্নশাখাস্থিত পক্ষী উপরিস্থ পক্ষীর নিকটবর্তী হইতে থাকে। যদি সৌভাগ্যক্রমে , সে ক্রমাগত সংসারের তীব্র আঘাত পায়, তবে সে তাহার সঙ্গী—তাহাব প্রাণ—তাহার সথ। সেই অপর পক্ষীর ক্রমশ: সমীপবর্তী হইতে থাকে। আর যতই সে অধিকতর নিকটবতী হয়, ততই দেখে সেই উপরিস্থ পক্ষীর দেহের জ্যোতিঃ আসিয়া তাহার পক্ষের চতুদিকে খেলা করিতেছে ; যতই সমীপবর্তী হয়, ততই তাহার রূপান্তর হইতে থাকে। ক্রমশঃ যতই সে নিকট হইতে নিকটতর হইতে থাকে, ততই দেখে—সে যেন মিলাইয়া যাইতেছে ; অবশেষে সম্পূর্ণ বিলীন হইয়া যায়। তখন সে বুঝিতে পারে—তাহার পৃথক্ অস্তিত্ব কোনকালে ছিল না, পত্ররাশির ভিতর সঞ্চরণশীল পক্ষীটি শাস্তু গম্ভীরভাবে উপবিষ্ট অপর পক্ষীর প্রতিবিম্বমাত্র । তখন সে জানিতে পারে—সে নিজেই ঐ উপরিস্থ পক্ষী, সে সর্বদাই শান্তভাবে অবস্থিত ছিল ; ঐ মহিমা তাহারই । তখন আর কোন ভয় থাকে না, তখন সে সম্পূর্ণ তৃপ্ত হইয়া ধীর শাস্তভাবে অবস্থান করে। এই রূপকের মাধ্যমে উপনিষদ তোমাদিগকে দ্বৈতভাব হইতে আরম্ভ করিয়া চূড়ান্ত অদ্বৈতভাবে লইয়া যাইতেছেন । উপনিষদের এই অপুর্ব কবিত্ব, মহত্ত্বের চিত্র, মহোচ্চ ভাবসমূহ দেখাইবার জন্য শত শত উদাহরণ উল্লেখ করা যাইতে পারে, কিন্তু এই বক্তৃতায় আমাদের আর সময় নাই । তবে আর একটি কথা বলিব—উপনিষদের ভাষা, ভাব সব কিছুরই ভিতর কোন কুটিল ভাব নাই, উহার প্রত্যেক কথাই তরবারি-ফলকের মতে, হাতুড়ির ঘায়ের মতো সাক্ষাংভাবে হৃদয়ে আঘাত করে। উহাদের অর্থ বুঝিতে কিছুমাত্র ভুল হইবার সম্ভাবনা নাই—সেই সঙ্গীতের প্রত্যেকটি স্বরের একটা জোর আছে, প্রত্যেকটি তাহার সম্পূর্ণ ভাব হৃদয়ে মুদ্রিত করিয়া দেয়। কোন ঘোরফের নাই, একটিও অসম্বদ্ধ প্ৰলাপ নাই, একটিও জটিল বাক্য নাই, যাহাতে মাথা গুলাইয়া যায়। উহাতে অবনতির চিহ্নমাত্র নাই, বেশী রূপক-বর্ণনার চেষ্টা নাই । বিশেষণের পর বিশেষণ দিয়া ভাবটিকে ক্রমাগত জটিলতর করা হইল, প্রকৃত বিষয়টি একেবারে চাপা পড়িল, মাথা গুলাইয়া গেল, তখন সেই শাস্ত্ররূপ গোলকধাঁধার বাহিরে যাইবার আর উপায় রহিল না—উপনিষদে এ-ধরনের চেষ্টার কোন পরিচয় পাওয়া যায় না। যদি ইহা মানবপ্রণীত হয়, তবে ইহা এমন এক জাতির সাহিত্য, যে-জাতি