পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (পঞ্চম খণ্ড).pdf/১৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আমাদের উপুস্থিত কর্তব্য శ్రీ ఫి অজ্ঞাতভাবে । ভারতের সকল বিষয়ই এইরূপ। ভারতীয় চিন্তার একটি লক্ষণ উহার শাস্তভুবি, উহার নীরবতা। আবার উহার পশ্চাতে যে প্রবল শক্তি রহিয়াছে, তাহাকে বল-বাচক কোন শব্দে অভিহিত করা যায় না। উহাকে ভারতীয় চিস্তারাশির নীরব মোহিনীশক্তি বলা যাইতে পারে। কোন বৈদেশিক যদি আমাদের সাহিত্য-অধ্যয়নে প্রবৃত্ত হয়, প্রথমতঃ উহা তাহার অতিশয় বিরক্তিকর লাগে ; উহাতে হয়তে তাহার দেশের সাহিত্যের মতো উদ্দীপনা নাই, তীব্র গতি নাই, যাহাতে সে সহজেই মাতিয়া উঠিবে। ইওরোপের বিয়োগ্রাস্ত নাটকগুলির সহিত আমাদের নাটকগুলির তুলনা কর । পাশ্চাত্য নাটকগুলি ঘটনাবৈচিত্র্যে পুর্ণ, ক্ষণকালের জন্য উদ্দীপিত করে ; কিন্তু শেষ হইয়। যাইবামাত্র প্রতিক্রিয়া আসে, স্মৃতি হইতে মুছিয়া যায়। ভারতের বিয়োগাস্ত নাটকগুলি যেন ঐন্দ্রজালিকের শক্তি, ধীর নিস্তব্ধভালে কাজ করে, একবার পড়িতে আরম্ভ করিলে উহাদের প্রভাব তোমার উপর বিস্তৃত হইতে থাকে ; আর কোথায় যাইবে ? তুমি বাধা পড়িলে ; আর যে-কোন ব্যক্তিই আমাদের সাহিত্যে প্রবেশ করিতে সাহসী হইয়াছে, সেই উহার বন্ধন অতুভব করিয়াছে—সেই উহার সহিত চিরপ্রেমে বাধা পড়িয়াছে । শিশিরবিন্দু যেমন নিস্তব্ধ অদৃশ্ব ও অশ্রুতভাবে পড়িয়া অতি স্বন্দর গোলাপকলিকে প্রস্ফুটিত করে, সমগ্র পৃথিবীর চিন্তারাশিতে ভারতের দান সেইরূপ বুঝিতে হইবে । নীরবে, অজ্ঞাতসারে অথচ অদম্য মহাশক্তিবলে উহ। সমগ্র পৃথিবীর চিন্তারাশিতে যুগান্থর আনিয়াছে, তথাপি কেহই জানে না-কখন এরূপ করিল । আমার নিকট একবার কথাপ্রসঙ্গে কেহ বলিয়াছিল, ‘ভারতীয় কোন প্রাচীন গ্রন্থকারের নাম আবিষ্কার করা কি কঠিন ব্যাপার ? ঐ কথায় আমি উত্তর দিই, ইহাই ভারতীয় ভাব। তাহারা আধুনিক গ্রন্থকারগণের মতো ছিলেন না—যাহারা অন্যান্য গ্রন্থকারের গ্রন্থ হইতে শতকরা নব্বই ভাগ চুরি করিয়াছেন, শতকরা দশভাগমাত্র তাহাদের নিজেদের, কিন্তু তাহারা গ্রন্থারস্তে একটি ভূমিকা লিখিয়া পাঠককে বলিতে ভুলেন নাই যে, এই-সকল মতামতের জন্য আমিই দায়ী ।’ -- যে-সকল মহামনীষী মানবজাতির হৃদয়ে মহান তত্ত্বসমূহের ভাব দিয়া গিয়াছেন, তাহার গ্রন্থ লিখিয়াই সন্তুষ্ট ছিলেন, গ্রন্থে নিজেদের নাম পর্যন্ত দেন