পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (পঞ্চম খণ্ড).pdf/১৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আমাদের উপস্থিত কর্তব্য » ማ¢ কাটিয়া ফেলিতে হইবে, নষ্ট করিতে হইবে । কিন্তু তাহাতে আমাদের ধর্ম, আমাদের আধ্যাত্মিকতা, আমাদের জাতীয় জীবন কিছুমাত্র নষ্ট হইবে না। ধর্মের মূলতত্ত্বগুলি ইহাতে অক্ষতই থাকিবে । আর এই কালো দাগগুলি যতই মুছিয়া যাইবে, ততই মূলতত্ত্বগুলি আরও উজ্জ্বলভাবে, সতেজে প্রকাশিত হইবে। ঐ তত্ত্বগুলিকে ধরিয়া থাকো । তোমরা শুনিয়ছি, পৃথিবীর প্রত্যেক ধৰ্মই নিজেকে সার্বভৌম ধর্ম বলিয়া দাবি করিয়া থাকে। প্রথমতঃ আমি বলিতে চাই যে, সম্ভবতঃ কোন ধর্মই কোন কালে সার্বভৌম ধর্মরূপে পরিগণিত হইবে না ; কিন্তু যদি কোন ধর্মের এই দাবি করিবার অধিকার থাকে, তবে আমাদের ধর্মই কেবল এই নামের যোগ্য হইতে পারে, অপর কোন ধর্ম নহে ; কারণ অন্যান্য সকল ধর্মই কোন ব্যক্তিবিশেষ অথবা ব্যক্তিগণের উপর নির্ভর করে। অন্যান্য সকল ধর্মই কোন তথাকথিত ঐতিহাসিক ব্যক্তির জীবনের সহিত জড়িত। উহারা মনে করে, ঐ ঐতিহাসিকতাই তাহাদের ধর্মের শক্তি, কিন্তু বাস্তবিক যাহাকে তাহারা সবলতা মনে করে, তাহাই প্রকৃতপক্ষে দুর্বলতা, কারণ যদি ঐ ব্যক্তির ঐতিহাসিকতা অপ্রমাণ করা যায়, তবে তাহাদের ধর্মরূপ প্রাসাদ একেবারে ধসিয়া পড়ে। ঐ ধর্ম-স্থাপক বড় বড় মহাপুরুষদের জীবনের অর্ধেক ঘটনা মিথ্যা প্রমাণিত হইয়াছে এবং অবশিষ্ট অর্ধেক সম্পর্কে বিশেষরূপে সন্দেহ উত্থাপিত হইয়াছে। সুতরাং কেবল তাহাদের কথার উপর যে-সকল সত্যের প্রামাণ্য ছিল, সেগুলি আবার শূন্যে বিলীন হইবার উপক্রম হইয়াছে। আমাদের ধর্মে যদিও মহাপুরুষের সংখ্যা যথেষ্ট, কিন্তু আমাদের ধর্মের সত্যসকল তাহাদের কথার উপর নির্ভর করে না। কৃষ্ণ বলিয়া কৃষ্ণের মাহাত্ম্য নহে, তিনি বেদান্তের একজন মহান আচার্য বলিয়াই তাহার মাহাত্ম্য। যদি তিনি তাহা না হইতেন, তবে বুদ্ধদেবের নামের মতো তাহার নামও ভারত হইতে একেবারে লোপ পাইত । স্বতরাং আমরা ব্যক্তিবিশেষের মতানুগামী নহি, আমরা চিরকালই ধর্মের তত্ত্বগুলির উপাসক। ব্যক্তিগণ সেই তত্ত্বসমূহের সাকারমূর্তিস্বরূপ—উদাহরণস্বরূপ। যদি ঐ তত্ত্বগুলি অবিকৃত থাকে, তবে শত সহস্র মহাপুরুষের, শত সহস্ৰ বুদ্ধের অভু্যদক্ষ হইবে। কিন্তু যদি ঐ তত্ত্বগুলি লোপ খায়, যদি মানুষ ঐগুলি ভুলিয়া যায়, আর সমস্ত জাতীয় জীবন তথাকথিত কোন ঐতিহাসিক ব্যক্তির মত অবলম্বন করিয়া চলিতে ষায়, তবে সেই ধর্মের অবনতি অনিবার্য, সেই ধর্মের