পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (পঞ্চম খণ্ড).pdf/১৯১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Y ዓb” স্বামীজীর বাণী ও রচনা গোপীগণের মধ্য হইতে শ্ৰীকৃষ্ণ অস্তহিত হইলে তাহার বিরহে বিলাপ করিতে করিতে গোপীদের মনে শ্রীকৃষ্ণের ভাবনা এরূপ প্রবল হইল যে, তাহাঁদের প্রত্যেকেই নিজ দেহ বিস্মৃত হইয়া নিজেকে শ্ৰীকৃষ্ণ-জ্ঞানে তাহারই মতো বেশভূষা করিয়া তাহারই লীলার অনুকরণ করিতে প্রবৃত্ত হইল। সুতরাং বুঝিতেছ, প্রেমবলেও এই একত্ব-অনুভূতি আসিয়া থাকে। জনৈক প্রাচীন পারস্যদেশীয় সুফীর একটি কবিতায় এই ভাবের কথা আছে : প্রেমাম্পদের নিকট গিয়া দেখিলাম—গৃহদ্বার রুদ্ধ । দ্বারে করাঘাত করিলাম, ভিতর হইতে প্রশ্ন হইল, কে ? উত্তর দিলাম, ‘আমি । দ্বার খুলিল না । দ্বিতীয়বার আসিয়া দ্বারে আঘাত করিলাম। আবার সেই প্রশ্ন, কে ? আবার উত্তর দিলাম, আমি অমুক। তথাপি দ্বার খুলিল না। তৃতীয়বার আসিলাম, পরিচিত কণ্ঠস্বর আবার জিজ্ঞাসা করিল, কে ? তখন বলিলাম—’হে প্রিয়তম, আমিই তুমি, তুমিই আমি । তখন দ্বার খুলিল । সুতরাং আমাদিগকে বুঝিতে হইবে ব্রহ্মানুভূতির বিভিন্ন সোপান আছে, আর যদিও প্রাচীন ভাষ্যকারগণের মধ্যে—যাহাদিগকে আমাদের শ্রদ্ধার চক্ষে দেখা উচিত র্তাহাদের মধ্যে—বিবাদ থাকে, তথাপি আমাদের বিবাদ করিবার কোন প্রয়োজন নাই, কারণ জ্ঞানের ইতি করা যায় না। প্রাচীনকালে বা বর্তমানকালে সর্বজ্ঞত্ব কাহারও একচেটিয়া অধিকার নহে। অতীত কালে যদি ঋষি-মহাপুরুষ হইয়া থাকেন, নিশ্চিত জানিও বর্তমানকালেও অনেক ঋষির অভু্যদয় হইবে ; যদি প্রাচীনকালে ব্যাস-বাল্মীকি-শঙ্করাচার্যগণের অভু্যদয় হইয়া থাকে, তবে তোমাদের মধ্যে প্রত্যেকেই এক এক জন শঙ্করাচার্য হইতে পারিবে না কেন ? আমাদের ধর্মের এই বিশেষত্বটিও তোমাদের সর্বদা স্মরণ রাখিতে হইৰব ; অন্যান্য ধর্মেও প্রত্যাদিষ্ট পুরুষগণের বাক্যই শাস্ত্রের প্রমাণস্বরূপ কথিত হইয়াছে বটে, কিন্তু এইরূপ পুরুষের সংখ্যা এক দুই অথবা কয়েকজন জন মাত্র,--র্তাহাদেরই মাধ্যমে সর্বসাধারণের নিকট সত্য প্রচারিত হইয়াছে ; আর সকলকেই তাহাদের কথা মানিতে হইবে । নাজারেথের যীশুর মধ্যে সত্যের প্রকাশ হইয়াছিল ; আমাদের সকলকে উহাই মানিয়া লইতে হইবে, আমরা আর বেশী কিছু জানি না। কিন্তু আমাদের ধর্ম বলে : भञ्जयडे ঋষিগণের ভিতর সেই সত্যের আবির্ভাব হইয়াছিল—একজন দুইজন নহে, অনেকের মধ্যে ঐ সত্য আবিভূত হইয়াছিল এবং ভবিষ্যতেও হইবে । ‘মন্ত্রভ্রষ্টী'