পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (পঞ্চম খণ্ড).pdf/১৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভারতের ভবিষ্কং > ケや তুলনা করা যায়, তবে দেখা যাইবে, অন্যান্য জাতি ষে-সকল উপাদানে গঠিত, সেগুলি অপেক্ষাকৃত অল্প। আর্য, দ্রাবিড়, তাতার, তুর্ক, মোগল, ইওরোপীয় —পৃথিবীর সকল জাতির শোণিত যেন এদেশে রহিয়াছে। এখানে নানা ভাষার অপুর্ব সমাবেশ—আর আচার-ব্যবহারে দুইটি ভারতীয় শাখাজাতির ঘে প্রভেদ, ইওরোপীয় ও প্রাচু জাতির মধ্যেও তত প্রভেদ নাই। কেবল আমাদের জাতির পবিত্র ঐতিহ—আমাদের ধর্মই আমাদের সম্মিলনভূমি, ঐ ভিত্তিতেই আমাদিগকে জাতীয় জীবন গঠন করিতে হইবে । ইওরোপে রাজনীতিই জাতীয় ঐক্যের ভিত্তি। এশিয়ায় কিন্তু ধর্মই ঐ ঐক্যের মূল। অতএব ভাবী ভারত-গঠনে ধর্মের ঐক্যসাধন অনিবাৰ্যরূপে প্রয়োজন। এই ভারতভূমির পুর্ব হইতে পশ্চিম, উত্তর হইতে দক্ষিণ সর্বত্র এক ধর্ম সকলকে স্বীকার করিতে হইবে। এক ধর্ম—এ কথা আমি কি অর্থে ব্যবহার করিতেছি ? খ্ৰীষ্টান, মুসলমান বা বৌদ্ধগণের ভিতর যে-হিসাবে এক ধর্ম বিদ্যমান, আমি সেহিসাবে ‘এক ধর্ম’ কথা ব্যবহার করিতেছি না। আমরা জানি, আমাদের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সিদ্ধান্তসমূহ যতই বিভিন্ন হউক, উহাদের যতই বিভিন্ন দাবি থাকুক, তথাপি কতকগুলি সিদ্ধাস্ত এমন আছে—যেগুলি সম্বন্ধে সকল সম্প্রদায়ই একমত। অতএব আমাদের সম্প্রদায়সমূহের এইরূপ কতকগুলি সাধারণ সিদ্ধাস্ত আছে, আর ঐগুলি স্বীকার করিবার পর আমাদের ধর্ম সকল সম্প্রদায় ও সকল ব্যক্তিকে বিভিন্ন ভাব পোষণ করিবার, ইচ্ছামত চিন্তা ও কাজ করিবার পুর্ণ সুধীনতা প্রদান করিয়া থাকে। আমরা সকলেই ইহা জানি, অন্ততঃ আমাদের মধ্যে যাহারা একটু চিন্তাশীলু, তাহারাই ইহা জানেন। আমরা চাই—আমাদের ধর্মের এই জীবনপ্রদ সাধারণ তত্ত্বসমূহ সকলের নিকট, এই দেশের আবালবৃদ্ধবনিতা সকলের নিকট প্রচারিত হউক, সকলেই সেগুলি জামুক, বুঝুক সুর . নিজেদের জীবনে পরিণত করিবার চেষ্টা করুক। সুতরাং ইহাই আমাদের প্রথম কর্তব্য । আমরা দেখিতে পাই, এশিয়ায়—বিশেষত: ভারতবর্ষে জাতি, ভাষা, সমাজ সম্বন্ধে সমুদয় বাধা ধর্মের সমন্বয়ী শক্তির নিকট তিরোহিত হয়। আমরা জানি, ভারতবাসীর ধারণা—আধ্যাত্মিক আদর্শ হইতে উচ্চতর আদর্শ আর কিছু নাই ; ইহাই ভারতীয় জীবনের মূলমন্ত্র, আর ইহাও জানি—আমরা স্বল্পতম বাধার পথেই কার্য করিতে পারি। :