পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (পঞ্চম খণ্ড).pdf/২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

δ & স্বামীজীর বলী ও রচনা বর্ণনা করিয়া থাকেন—এই মহাবাণী উখিত হইয়াছিল। শিব বিষ্ণু অপেক্ষা বড় নহেন, অথবা বিষ্ণুই সব, শিব কিছুই নহেন—তাহাও নহে। এক ভগবানকেই কেহ শিব, কেহ বিষ্ণু, আবার অপরে অন্যান্য নানা নামে ডাকিয়া থাকে। নাম বিভিন্ন, কিন্তু বস্তু এক । পুর্বোক্ত কয়েকটি কথার মধ্যে ভারতের সমগ্র ইতিহাস পাঠ করিতে পারা যায়। সমগ্র ভারতের বিস্তারিত ইতিহাস ওজস্ব ভাষায় সেই এক মূল তত্ত্বের পুনরুক্তিমাত্র। এই দেশে এই তত্ত্ব বার বার উচ্চারিত হইয়াছে ; পরিশেষে উহা এই জাতির রক্তের সহিত মিশিয়া গিয়াছে, এই জাতির ধমনীতে প্রবাহিত প্রতিটি শোণিতবিন্দুতে উহা মিশ্রিত হইয়া শিরায় শিবায় প্রবাহিত হইয়াছে—জাতীয় জীবনের উপাদানস্বরূপ হইয়া গিয়াছে, যে উপাদানে এই বিরাট জাতীয় শরীর নির্মিত, তাহার অংশস্বরূপ হইয়া গিয়াছে। এইরূপে এই ভারতভূমি পরধর্ম-সহিষ্ণুতার এক অপুর্ব লীলাক্ষেত্রে পরিণত হইয়াছে। এই শক্তিবলেই আমরা আমাদের এই প্রাচীন মাতৃভূমিতে সকল ধর্মকে, সকল সম্প্রদায়কে সাদরে ক্রোড়ে স্থান দিবার অধিকার লাভ করিয়াছি । এই ভারতে আপাতবিরোধী বহু সম্প্রদায় বর্তমান, অথচ সকলেই নির্বিরোধে বাস করিতেছে। এই অপুর্ব ব্যাপারের একমাত্র ব্যাখ্যা-পরমধর্ম-সহিষ্ণুত । তুমি হয়তো দ্বৈতবাদী, আমি হয়তে অদ্বৈতবাদী। তোমার হয়তো বিশ্বাস– তুমি ভগবানের নিত্য দাস, আবার আর একজন হয়তে। বলিত পারে, যে ব্রহ্মের সহিত অভিন্ন ; কিন্তু উভয়েই খাটি হিন্দু । ইহা কিরূপে সম্ভব হয় ? সেই মহাবাক্য পাঠ কর, তাহা হইলেই বুঝিবে ইহা কিরূপে সম্ভব—একং সদ্বিপ্রা বহুধা বদন্তি’—সৎস্বরূপ এক, ঋষিগণ র্তাহাকে বিভিন্ন নামে অভিহিত করেন । হে আমার স্বদেশীয় ভ্রাতৃবৃন্দ ! সর্বোপরি পৃথিবীকে এই মহান সত্যটি আমাদের শিখাইতে হইবে । অন্যান্য দেশের বড় বড় শিক্ষিত ব্যক্তিগণও নাসিক কুঞ্চিত করিয়া আমাদের ধর্মকে পৌত্তলিকতা বলেন । আমি তাহাদিগকে এইরূপ করিতে দেখিয়াছি, কিন্তু তাহার স্থির হইয়া কখনও ভাবেন না যে, র্তাহাদের মস্তিষ্কে কি ঘোর কুসংস্কাররাশি বর্তমান! এখনও সর্বত্র এই ভাব— এই ঘোর সাম্প্রদায়িকতা, মনের এই নীচ সঙ্কীর্ণতা ! তাঁহারা মনে করেন, তাহাদের নিজেদের যাহা আছে, তাহাই মহা মূল্যবান ; অর্থে পার্জনই তাহাদের