পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (পঞ্চম খণ্ড).pdf/২৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গীতাতত্ত্ব 8》 - le অনেকে অকুমান করেন, যাহার কথা লইয়া দয়ানন্দ স্বামী প্রায় নাড়াচাড়া করিতেন, তাহ আমি সমুদ্রয় ভারতবর্ষ খুজিয়া এ পর্যন্ত দেখিতে পাই নাই। শুনিতে পাওয়া যায়, রামানুজও অপর লোকের হস্তে একটি কীটদষ্ট পুথি দেখিয়া তাহা হইতে র্তাহার ভাষ্য রচনা করেন। বেদান্তের বোধায়ন-ভাৰ্যই যখন এতদূর অনিশ্চয়ের অন্ধকারে, তখন গীতাসম্বন্ধে তৎকৃত ভাস্তুের উপর কোন প্রমাণ স্থাপন করিবার চেষ্টা বৃথা প্রয়াসমাত্র। অনেকে এইরূপ অনুমান করেন যে, গীতাখানি শঙ্করাচার্য-প্রণীত । তাহদের মতে—তিনি উহা প্রণয়ন করিয়া মহাভারতের মধ্যে প্রবেশ করাইয় দেন । দ্বিতীয় প্রশ্ন কৃষ্ণসম্বন্ধে সন্দেহ এই ; ছন্দোগ্য উপনিষদে এক স্থলে পাওয়া যায়, দেবকীপুত্র কৃষ্ণ ঘোরনাম কোন ঋষির নিকট উপদেশ গ্রহণ করেন । মহাভারতে কৃষ্ণ দ্বারকার রাজা, আর বিষ্ণুপুরাণে গোপীদের সহিত বিহারকারী কৃষ্ণের কথা বর্ণিত আছে । আবার ভাগবতে কৃষ্ণের রাসলীলা বিস্তারিতরূপে বর্ণিত আছে । অতি প্রাচীনকালে আমাদের দেশে মদনোৎসব নামে এক উৎসব প্রচলিত ছিল । সেইটিকেই লোকে দোলরূপে পরিণত করিয়া কৃষ্ণের ঘাড়ে চাপাইয়াছে। রাসলীলাদিও যে ঐরুপে চাপানো হয় নাই, কে বলিতে পারে ? পূর্বকালে আমাদের দেশে ঐতিহাসিক সত্যানুসন্ধান করিবার প্রবৃত্তি অতি সামান্তই ছিল। স্বতরাং যাহার যাহা ইচ্ছ, তিনি তাহাই বলিয়া -গিয়াছেন। আর পূর্বকালে,লোকের নাম-যশের আকাজ খুব ठाझझे क्लिल । এরূপ অনেক হইয়াছে, ষেখানে একজন কোন গ্রন্থ প্রণয়ন করিয়া গুরু অথবা অপর কাহারও নামে চালাইয়া দিয়া গেলেন । এইরূপ স্থলে সত্যাহসদ্ধিংস্থ ঐতিহাসিকের বড় বিপদ । পুর্বকালে ভূগোলের জ্ঞানও কিছুমাত্র ছিল না —অনেকে কল্পনাবলে ইক্ষুসমূদ্র, ক্ষীরসমূদ্র, দধিসমুদ্রাদি রচনা করিয়াছেন। পুরাণে দেখা যায়, কেহ অযুত বর্ষ, কেহ লক্ষ বর্ষ জীবনধারণ করিতেছেন ; কিন্তু আবার বেদে পাই, শতামূর্বৈ পুরুষঃ’ । আমরা এখানে কাহার অহুসরণ করিব ? স্বতরাং কৃষ্ণসম্বন্ধে সঠিক ঐতিহাসিক সিদ্ধাস্ত করা একরূপ অসম্ভব। লোকের একটা স্বভাবই এই যে, কোন মহাপুরুষের প্রকৃত চরিত্রের চতুর্দিকে তাহাঙ্গ নানাবিধ অস্বাভাবিক কল্পনা করে।