পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (পঞ্চম খণ্ড).pdf/২৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গীতাতত্ত্ব 3 অবস্থায় পহুছিয়াছেন, আর একজনের জ্ঞানেন্মেষ মোটেই হয় নাই। আলোকের, পরমাণুর অতি তীব্র স্পন্দন ও অতি মৃদু স্পন্দন উভয়ই দৃষ্টির বহিভূত। কিন্তু একটিতে তীব্র উত্তাপ ও অপরটিতে তাহার অত্যন্তাভাব বলিলেই হয় । সত্ত্ব ও তমোগুণ কিয়দংশে একরূপ দেখাইলেও উভয়ে অনেক প্রভেদ । তমোগুণ সত্ত্বগুণের পরিচ্ছদ ধারণ করিয়া আসিতে বড় ভালবাসে ; এখানে দয়ারূপ অবিরণে উপস্থিত হইয়াছেন । অজুনের এই মোহ অপনয়ন করিবার জন্য ভগবান কি বলিলেন ? আমি যেমন প্রায়ই বলিয়া থাকি যে, লোককে পাপী না বলিয়া তাহার ভিতর ষে মহাশক্তি আছে, সেই দিকে তাহার দৃষ্টি আকৃষ্ট কর, ঠিক সেই ভাবেই ভগবান বলিতেছেন, ‘নৈতত্ত্বযুপপদ্যতেী—তোমাতে ইহা সাজে না । তুমি সেই আত্মা, তুমি স্বরূপকে ভুলিয়া আপনাকে পাপী রোগী শোকগ্রস্ত করিয়া তুলিয়াছ— এ তো তৈামার সাজে না। তাই ভগবান বলিতেছেন, "ক্লৈব্যং মান্ম গম: পার্থ। জগতে পাপতাপ নাই, রোগশোক নাই ; যদি কিছু পাপ জগতে থাকে, তাহা এই ‘ভয় । যে-কোন কার্য তোমার ভিতরে শক্তির উদ্রেক করিয়া দেয়, তাহাই পুণ্য ; আর যাহা তোমার শরীর-মনকে দুর্বল করে, তাহাই পাপ । এই দুর্বলতা পরিত্যাগ কর । "ক্লৈব্যং মান্ম গম: পার্থ, তুমি বীর, তোমার এ ( ক্লীবতা ১ সাজে না । তোমরা যদি জগৎকে এ-কথা শুনাইতে পারো–ক্লৈব্যং মাস্ম গম: পার্থ নৈতত্ত্বযুপপদ্যতে’, তাহা হইলে তিন দিনের ভিতর এ-সকল রোগ-শোক, পাপ-তাপ কোথায় চলিয়া যুাইবে । এখানকার বায়ুতে ভয়ের কম্পন বহিতেছে। এ কম্পন উলটাইয়া দাও। তুমি সর্বশক্তিমান—যাও, তোপের মুখে যাও, ভয় করিও না । মহাপাপীকে ঘৃণা করিও না, তাহার বাহির দিক দেখিও না । ভিতরের দিকে যে পরমাত্মা রহিয়াছেন, সেই দিকে দৃষ্টিপাত কর ; সমগ্র জগৎকে বলো—তোমাতে পাপ নাই, তাপ নাই, তুমি মহাশক্তির আধার। । এই একটি শ্লোক পড়িলেই সমগ্র গীতাপাঠের ফল পাওয়া যায়, কারণ এই শ্লোকের মধ্যেই গীতার সমগ্র ভাব নিহিত ।