পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (পঞ্চম খণ্ড).pdf/২৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শিয়ালকোটে বক্তৃতা—ভক্তি ૨૭૭ ইরানীদের মধ্যে অগ্নিপুজা খুব প্রচলিত। মুসলমানেরা বড় বড় সাধু মহাপুরুষদের পুজা করিয়া থাকেন, আর প্রার্থনার সময় কাবা’র দিকে মুখ ফিরান। এই-সকল দেখিয়া মনে হয় যে, ধর্মসাধনের প্রথমাবস্থায় লোকের কিছু বাহ সহায়তার প্রয়োজন থাকে যখন চিত্ত অনেকটা শুদ্ধ হইয়া আসে, তখন সূক্ষ্ম হইতে স্বক্ষতর বিষয়সমূহে ক্রমশ:.মন নিবিষ্ট করা যাইতে পারে। উত্তমে ব্রহ্মসদ্ভাবে ধ্যানভাবস্তু মধ্যম: ! স্তুতির্জপোহধমো ভাবো বাহপুজাধমাধম ॥১ —ব্রহ্মভাবে অবস্থিতিই সর্বোৎকৃষ্ট, ধ্যান মধ্যম, স্তুতি ও জপ অধম এবং বাহাপুজা অধমাধম। কিন্তু এখানে এই কথাটি বিশেষভাবে বুঝিতে হইবে যে, বাহপুজা অধমাধম হইলেও ইহাতে কোন পাপ নাই। যে যেমন পারে, তাহার তেমন করা উচিত। যদি তাহকে সেই পথ হইতে নিবৃত্ত করা যায়, তবে সে নিজের কল্যাণের জন্য—নিজের উদেশ্বসিদ্ধির জন্য অন্য কোনরূপে উহা করিবে । এই জন্য যে প্রতিমাপুজা করিতেছে, তাহার নিন্দ করা উচিত নয়। সে উন্নতির ঐ সোপান পর্যন্ত আরোহণ করিয়াছে, সুতরাং তাহার বাহপুজা চাই-ই চাই । যাহারা সমর্থ, তাহারা ঐ-সকল ব্যক্তির চিত্তের অবস্থার উন্নতিসাধনের চেষ্ট করুন—র্তাহীদের দ্বারা ভাল ভাল কাজ করাইয়া লউন । কিন্তু র্তাহাদের উপাসনা-প্রণালী লইয়া-বিবাদের প্রয়োজন কি ? . কেহ ধন, কেহ বা পুত্রলাভের জন্য ভগবানের উপাসনা করিয়া থাকে। আর উপাসনা করে বলিয়, তাহারা নিজেদের ‘ভাগবত বলিয়া পরিচয় দেয়। কিন্তু উহা প্রকৃত ভক্তি নহে, তাহারাও যথার্থ ভাগবত নহে। যদি তাহারা শুনিতে পায়, অমুক স্থানে এক সাধু আসিয়াছে—সে তামাকে স্ট্রোনা করিতে পারে, অমনি তাহার নিকট তাহারা দলে দলে ছুটিতে থাকে। তথাপি তাহারা নিজেদের ভাগবত বলিয়া পরিচয় দিতে কুষ্ঠিত হয় না। পুত্রলাভের জন্য ঈশ্বরের উপাসনাকে ভক্তি বলা যায় না, ধনী হইবার জন্য ঈশ্বরের উপাসনাকে ভক্তি বলা যায় না, স্বৰ্গলাভের জন্য ঈশ্বরের উপাসনাকেও ভক্তি বলা যায় না, এমন কি নরকষন্ত্রণা হইতে নিস্তার পাইবার জন্য ঈশ্বরের ১ মহানির্বাণতন্ত্র, ১৪।১২২