পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (পঞ্চম খণ্ড).pdf/২৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

: ዓv} স্বামীজীর বাণী ও রচনা বাহ জগৎ সূক্ষ্মাবস্থায় পরিণত হয়, কিছুকালের জন্য ঐরুপ অবস্থায় থাকিয়া আবার অভিক্ষিপ্ত হইয়া প্রকৃতি-নামুধেয় এই অনন্ত প্রপঞ্চকে প্রকাশ করে এবং তরঙ্গাকার এই গতি অনন্তকাল ধরিয়া—যখন কালেরও আরম্ভ হয় নাই; তখন হইতেই চলিতেছে এবং অনন্তকাল ধরিয়া চলিবে । * সকল হিন্দুই আরও বিশ্বাস করে যে, স্কুল জড় দেহটা, এমন কি তাহার অভ্যন্তরস্থ মন নামক সূক্ষ্ম শরীরও প্রকৃত মানুষ নহে, কিন্তু প্রকৃত মানুষ এইগুলি অপেক্ষাও মহত্তর । কারণ স্থূলদেহ পরিণামী, মনও তদ্রুপ, কিন্তু এতদুভয়ের অতীত আত্মা নামধেয়—এই ‘আত্মা’ শব্দটির ইংরেজী অনুবাদ করিতে আমি অক্ষম, যে শব্দের দ্বারাই ইহার অনুবাদ করা যাক না কেন, তাহ। ভূল হইবে—সেই অনির্বচনীয় বস্তুর আদি-অন্ত কিছুই নাই, মৃত্যুনামক অবস্থাটির সহিত উল্লা পরিচিত নহে । তারপর আর একটি বিশেষ বিষয়ে অন্যান্য জাতির সহিত আমাদের ধারণার সম্পূর্ণ প্রভেদ, তাহা এই যে, আত্মা এক দেহ-অবসানে আর এক দেহ ধারণ করে ; এইরূপ করিতে করিতে তাহার এমন অবস্থা আসে, যখন তাহার কোনরূপ শরীরধারণের প্রয়োজন বা ইচ্ছা থাকে না, তখন সে মুক্ত হইয়া যায়, তাহার আর জন্ম হয় না। আমি আমাদের শাস্ত্রে সংসারবাদ বা পুনর্জন্মবাদ এবং নিত্য-আত্মা’ সম্বন্ধীয় মতবাদের কথা বলিতেছি । আমরা যে সম্প্রদায়ভুক্তই হই না কেন, এই আর একটি বিষয়ে আমরা সকলেই একমত। এই আত্মা ও পরমাত্মার সম্বন্ধবিষয়ে আমাদের মধ্যে মতভেদ থাকিতে পারে। এক সম্প্রদায়ের মতে এই আত্মা পরমাত্মা হইতে নিত্য ভিন্ন হইতে পারে, কাহারও মতে আবার উহা সেই অনন্ত বহ্নির ফুলিঙ্গমাত্র হইতে পারে, অন্যের মতে হয়তো উহা অনন্তের সহিত অভেদ । আমরা এই আত্মার ও পরমাত্মার সম্বন্ধ লইয়া যেরূপ ইচ্ছা ব্যাখ্যা করি না কেন, তাহাতে বিশেষ কিছু আসিয়া যায় না ; কিন্তু যতক্ষণ আমরা এই মূলতত্ত্ব বিশ্বাস করি যে, আত্মা অনন্ত, উহা কখনও স্বই হয় নাই, সুতরাং কখনই উহার বিনাশ হইবে না, উহাকে বিভিন্ন শরীর ধরিয়া ক্রমশঃ উন্নতিলাভ করিতে হইবে, অবশেষে মচুন্যশরীর ধারণ করিয়া পুর্ণত্বলাভ করিতে হইবে—ততক্ষণ আমরা সকলেই একমত। * তারপর প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য ভাবের মধ্যে সম্পূর্ণ ভেদসাধক, ধর্মরাজ্যের মহত্তম ও অপুর্বতম আবিষ্কার-রূপ তত্ত্বটির কথা তোমাদিগকে বলিব ।