পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (পঞ্চম খণ্ড).pdf/৩১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বেদান্ত ఫిసిసి বাইবেল-স্বরূপ হইয়া দাড়াইয়াছে। বেদের কর্মকাণ্ডকে হিন্দুরা খুব শ্রদ্ধার চক্ষে দেখিয়া থাকেন, কিন্তু আমরা জানি, প্রকৃতপক্ষে শত শত যুগ ধরিয়া ‘শ্রুতি’ অর্থে উপনিষদ—কেবল উপনিষদই বুঝাইয়াছে। আমরা জানি, আমাদের বড় বড় দার্শনিকগণ—ব্যাস, পতঞ্জলি, গৌতম, এমন কি দর্শনশাস্ত্রের জনকস্বরূপ মহাপুরুষ কপিল পর্যন্ত—rযখন তাহাদের মতের সমর্থক প্রমাণের প্রয়োজন হইয়াছে, তখনই তাহারা উপনিষদ হইতেই উহা পাইয়াছেন, অন্য কোথায় নহে ; কারণ উপনিষদসমূহের মধ্যেই সনাতন সত্য অনন্তকালের জন্য নিহিত রহিয়াছে । কতকগুলি সত্য আছে, যেগুলি কেবল বিশেষ দেশ-কাল-পাত্রে বিশেষ অবস্থায় সত্য । সেগুলি বিশেষ যুগের বিধান হিসাবে সত্য । আবার কতকগুলি সত্য আছে, সেগুলি মানবপ্রকৃতির উপর প্রতিষ্ঠিত যতদিন মাহুষের অস্তিত্ব থাকিবে, সেগুলিও ততদিন থাকিবে। এই শেষোক্ত সত্যগুলি সর্বজনীন ও সার্বকালিক ; আর যদিও আমাদের ভারতীয় সমাজে নিশ্চয়ই অনেক পরিবর্তন ঘটিয়াছে, আমাদের আহার-বিহার পোশাক-পরিচ্ছদ উপাসনাপ্রণালী এ-সকলই যদিও অনেক বদলাইয়াছে, কিন্তু এই শ্রেীত সর্বজনীন সত্যসমূহ— বেদাস্তের এই অপুর্ব তত্ত্বরাশি—স্বমহিমায় অচল অজেয় ও অবিনাশী হইয়া রহিয়াছে । উপনিষদের যে-সকল তত্ত্ব বিশেষভাবে পরিস্ফুট হইয়াছে, সেগুলির বীজ কুন্তু কর্মকাণ্ডেই পূর্ব হইতে নিহিত দেখিতে পাওয়া যায়। জগৎ-তত্ব, যাহা সকল সম্প্রদায়ের বৈদাস্তিস্তগণকেই মানিয়া লইতে হইয়াছে ; এমন কি মনোবিজ্ঞানতত্ত্ব—যাহা সকল ভারতীয় চিন্তাপ্রণালীর মূলভিত্তিস্বরূপ, তাহাও কর্মকাণ্ডে বিবৃত ও জগতের সমক্ষে প্রচারিত হইয়াছে। অতএব বেদান্তর আধ্যাত্মিক ভাগের বিষয় বলিবার পুর্বে আপনাদের সমক্ষে কর্মকাণ্ড সম্বন্ধে কিছু বলা আবশ্বক, আর বেদান্ত-শকটি কি অর্থে আমি ব্যবহার করিতেছি, তাহা প্রথমেই আপনাদের নিকট পরিষ্কার করিয়া বলিতে চাই। দুঃখের বিষয়, আজকাল আমরা প্রায়ই একটি বিশেষ ভ্রমে পতিত হইয়া থাকি—আমরা বেদান্ত-শব্দে কেবল অদ্বৈতবাদ বুঝিয়া থাকি । আপনাদের কিন্তু এইটি সর্বদা মনে রাখা আবুষ্ঠক যে, বর্তমান ভারতবর্ষে সকল ধর্মমত অধ্যয়ন করিতে প্রস্থানত্রয় সমভাবে উপযোগী ও গুরুত্বপূর্ণ।