পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (পঞ্চম খণ্ড).pdf/৩৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

3২ ০ স্বামীজীর বাণী ও রচনা লোকে কেন এই ঈশ্বর কল্পনা করিল ? কারণ প্রাচীনকালে কয়েকজন বলবান ব্যক্তি সাধারণ লোককে বশ করিয়া বলিয়ছিল, তোমাদিগকে আমাদের হুকুম মানিয়া চলিতে হইবে, নতুবা তোমাদের সমূলে বিনাশ করিব। এইরূপ লোকই ব্যক্তিবিশেষ ঈশ্বরের কল্পনা করিয়াছিল—ইহার অন্য কোন কারণ নাই —‘মহদ্ভয়ং বজ্ৰমুদ্যতম। একজন বজহস্ত পুরুষ রহিয়াছেন, তাহার আজ্ঞ যে লঙ্ঘন করে, তাহাকেই তিনি বিনাশ করেন । বৌদ্ধ বলিতেছেন ; তোমরা যুক্তিবাদী হইয়া বলিতেছ, সবই কর্মফলে হইয়াছে । তোমরা সকলেই অসংখ্য জীবাত্মায় বিশ্বাসী, আর তোমাদের মতে এই-সকল জীবাত্মার জন্ম-মৃত্যু নাই। এ পর্যন্ত বেশ যুক্তি ও ন্যায়-সঙ্গত কথা বলিয়াচ, সন্দেহ নাই । কারণ থাকিলেই কার্য থাকিবে ; বর্তমানে যাহা ঘটিতেছে, তাহা অতীত কারণের ফল ; আবার এই বর্তমান ভবিষ্যতে অন্য ফল প্রসব করিবে । হিন্দু বলিতেছেন : কর্ম জড, চৈতন্য নহে ; সুতরাং কর্মের ফললাভ করিতে হইলে কোনরূপ চৈতন্তের প্রয়োজন । বৌদ্ধ তাহাতে বলেন : বৃক্ষ হইতে ফললাভ করিতে গেলে কি চৈতন্তের প্রয়োজন হয় ? যদি বীজ পুতিয়া গাছে জল দেওয়া যায়, তাহার ফল পাইতে তো কোনরূপ চৈতন্যের প্রয়োজন হয় না। বলিতে পারো, আদি চৈতন্তের শক্তিতে এই ব্যাপার ঘটিয়া থাকে, কিন্তু জীবাত্মাগণই তো চৈতন্য, অন্য চৈতন্য স্বীকার করিবার প্রয়োজন কি ? যদি জীবাত্মাদের চৈতন্য থাকে, তবে ঈশ্বরবিশ্বাসের প্রয়োজন কি ? অবশ্য বৌদ্ধের জীবাত্মার অস্তিত্বে বিশ্বাসী নহেন ; কিন্তু জৈনের জীবাত্মায় বিশ্বাসী, অথচ ঈশ্বর বিশ্বাস করেন না। তবে হে দ্বৈতবাদিন, তোমার যুক্তি কোথায় রহিল, তোমার নীতির ভিত্তি কোথায় রহিল ? যখন তোমরা অদ্বৈতবাদের উপর দোষারোপ করিয়া বলে যে, অদ্বৈতবাদ হইতে দুনীতির স্বষ্টি হইবে, তখন একবার ভারতের দ্বৈতবাদী সম্প্রদায়ের ইতিহাস পাঠ করিয়া দেখ ; আদালতে দ্বৈতবাদীদের নীতিপরায়ণতার কিরূপ প্রমাণ পাও, তাহাও আলোচনা করিয়া দেখ। যদি অদ্বৈতবাদী কুড়ি হাজার দুৰ্বত্ত হইয়া থাকে, তবে দ্বৈতবাদীও কুড়ি হাজার দেখিতে পাইবে । মোটামুটি বলিতে গেলে বলিতে হয়, দ্বৈতবাদী দুবৃত্তের সংখ্যাই অধিক হইবে ; কারণ অদ্বৈতবাদ বুঝিতে উৎকৃষ্টতর চিত্তবৃত্তিসম্পন্ন মাহুষের প্রয়োজন, আর তাহাদিগকে সহজে ভয় দেখাইয়া কোন কাজ