পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (পঞ্চম খণ্ড).pdf/৩৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\3ՀՀ স্বামীজীর বাণী ও রচনা আর হে সাংখ্যবাদী ও অন্যান্য দ্বৈতবাদিগণ, তোমরা বলিয়া থাকে, আত্মা সর্বব্যাপী বিভূ, অথচ তোমরা কিরূপে বহু আত্মা স্বীকার কর ? অনুন্ত কি কখন দুইটি হইতে পারে? অনন্ত সত্তা একটিমাত্র হওয়াই সম্ভব। একমাত্র অনন্ত আত্মা রহিয়াছেন, আর সব তাহারই প্রকাশ । t বৌদ্ধ এই উত্তরে নীরব, কিন্তু অদ্বৈতবাদী শুধু বৌদ্ধকে নিরস্ত করিয়াই ক্ষাস্ত নহেন। দুর্বল মতবাদসমূহের ন্যায় কেবল অপর মতের সমালোচনা করিয়াই অদ্বৈতবাদী নিরস্ত নহেন। অদ্বৈতবাদী তখনই অন্যান্য মতাবলম্বীদের সমালোচনা করেন, যখন খুব কাছে আসিয়া তাহারা অদ্বৈতমত খণ্ডন করিতে প্রবৃত্ত হয় । তিনি তাহাদিগকে দূরে সরাইয়া দেন, এই পর্যন্তই তাহার অন্যান্য মতাবলম্বীদের বাদখগুন । তারপর তিনি নিজেই সিদ্ধান্ত স্থাপন করেন। একমাত্র অদ্বৈতবাদই শুধু পরমত থগুন করিয়া এবং তজ্জন্য শাস্ত্রের দোহাই দিয়া নিরস্ত থাকে না। অদ্বৈতবাদীর যুক্তি এইরূপ—তিনি বলেন : তুমি বলিতেছ— জগং একটি অবিরাম গতিপ্রবাহমাত্র। ভাল, ব্যষ্টিতে সবই গতিশীল বটে । তোমারও গতি আছে ; এই টেবিলটি—ইহারও প্রতিনিয়ত গতি বা পরিবর্তন হইতেছে। গতি সর্বত্রই, তাই ইহার নাম সংসার ; স্ব' ধাতুর অর্থ গমন, তাই ইহার নাম জগৎ— অবিরাম গতি । তাই যদি হইল, তাহা হইলে তো এই জগতে ‘ব্যক্তিত্ব বলিয়া কিছু থাকিতে পারে না ; কারণ ব্যক্তিত্ব বলিতে অপরিণামী কিছু বুঝায়। পরিণামশীল ব্যক্তিত্ব’ হইতে পারে না, এই বাক্যটি স্ববিরোধী, সুতরাং আমাদের এই ক্ষুদ্র জগতে ব্যক্তিত্ব বলিয়া কিছু নাই। চিন্তা ভাব, মন শরীর, জীব জন্তু—সকলেরই অহরহ। পরিণাম হইতেছে । যাহা হউক, এখন সমগ্র জগৎকে একটি সমষ্টিরূপে ধর । সমষ্টিরূপে কি এই জগতের পরিণাম বা গতি হইতে পারে? কখনই নহে। কোন অল্প গতিশীল অথবা সম্পূর্ণ গতিহীন বস্তুর সহিত তুলনা করিয়াই গতির ধারণ সম্ভব । অতএব সমষ্টিরূপে জগং গতিহীন, পরিণামহীন। সুতরাং তখনই—কেবল তখনই তোমার প্রকৃত ব্যক্তিত্ব সম্ভব, যখন তুমি নিজেকে সমগ্র জগতের সহিত অভিন্নভাবে জানিতে পারে । এই কারণেই বেদান্তী-—অদ্বৈতবাদী বলেন : যতদিন দ্বৈত, ততদিন ভয় দূর হইবার উপায় নাই ; মানুষ যখন অপর বলিয়া কিছু দেখে না, অপর বলিয়া কিছু অনুভব করে না, যখন একমাত্র সত্তা থাকে, তখনই তাহার ভয় দূর । হয় ; তখনই মামুথু মৃত্যুর ੇ সংসারের পারে যাইতে পারে। স্বতরাং