পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (পঞ্চম খণ্ড).pdf/৩৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

లిపి 3 স্বামীজীর বাণী ও রচনা নিকট যে-সকল পাশ্চাত্যদেশীয় প্রলোভন আসিয়া থাকে, সেগুলির একমাত্র দার্শনিক ভিত্তি এই যে, ইন্দ্রিয়জ্ঞান অপেক্ষ উচ্চতর জ্ঞান নাই। . প্রাচুদেশের কিন্তু অন্য ভাব । আমাদের বেদ বলিতেছেন : বস্তুজ্ঞান বস্তু হইতে নিম্নস্থানীয়, কারণ জ্ঞান-অর্থে সর্বদাই একটা সীমাবদ্ধ ভাব বুঝিতে হইবে। যখনই তুমি কোন বস্তুকে জানিতে চাও, তখনই উহা তোমার মনের দ্বারা সীমাবদ্ধ হইয়। যায়। পূর্বকথিত দৃষ্টাস্তে যে ভাবে শুক্তি হইতে মুক্ত নির্মিত হয়, বলা হইয়াছে— সেই কথা চিন্তা কর, তাহা হইলে বুঝিবে জ্ঞান-অর্থে সীমাবদ্ধ করা কিরূপ । একটি বস্তুকে আহরণ করিয়া তোমার চেতনায় আনিলে তাহার সমগ্র ভাবটি জানিতে পারিবে না । সকল জ্ঞান সম্বন্ধেই এই কথা থাটে । তাই যদি হয়, জ্ঞান-অর্থে যদি সীমাবদ্ধ করা হয়, তবে অনন্তেব জ্ঞান সম্বন্ধে কি উহা কম প্রযোজ্য? যিনি সকল জ্ঞানের স্বরূপ, যাহাকে ছাড়িয়া তুমি কোন জ্ঞানলাভ করিতে পার না, যাহার কোন গুণ নাই, যিনি সমগ্র জগতের এবং আমাদের অন্ত:করণের সাক্ষিস্বরূপ, তুমি কি তাহাকে এইভাবে সীমাবদ্ধ করিতে পারে ? তাহাকে তুমি কিরূপে জানিবে ? কি উপায়ে তাহাকে বাধিবে ? সব কিছু—এই জগৎপ্ৰপঞ্চ এইরূপ বাধিবার বৃথা চেষ্টা । এই অনন্ত আত্মা যেন নিজের মুখ দেখিবার চেষ্টা করিতেছেন, নিম্নতম প্রাণী হইতে উচ্চতম দেবতা পর্যন্ত সব যেন তাহার মুখ প্রতিবিম্বিত করিবার দর্পণ ; আরও কত আধার তিনি গ্রহণ করিতেছেন, কিন্তু কোনটিই পর্যাপ্ত নয়, অবশেষে মহন্তদেহে তিনি বুঝিতে পারেন যে, এ-সবই সসীম—অনন্ত কখন সাস্তের মধ্যে আত্মপ্রকাশ করিতে পারেন না । তারপর শুরু হয় প্রত্যাবর্তন এবং ইহাই ত্যাগ বা বৈরাগ্য। ইক্রিয় হইতে প্রত্যাবৃত্ত হও, ইন্দ্রিয়ের অভিমুখে যাইও না—ইহাই বৈরাগ্যের মূলমন্ত্র। ইহাই সর্বপ্রকার নীতির মূলমন্ত্র, ইহাই সর্বপ্রকার কল্যাণের মূলমন্ত্র, কারণ তোমাদিগকে অবশ্য মনে রাখিতে হইবে তপস্তাতেই জগতের স্বষ্টি—ত্যাগেই জগতের উৎপত্তি। আর যতই তুমি ক্রমশঃ ফিরিয়া আসিবে, ততই তোমার সম্মুখে ধীরে ধীরে বিভিন্ন রূপ, বিভিন্ন দেহ প্রকাশিত হইতে থাকিবে, এক'এক 'করিয়া সেগুলি পরিত্যক্ত হইবে, অবশেষে তুমি স্বরূপতঃ যাহা, তাহাই থাকিবে । ইহাই মোক্ষ ।