পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (পঞ্চম খণ্ড).pdf/৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জাফনায় বক্তৃতা—বেদাস্ত ૨ 8 মানুষের কল্পিত নিষ্ঠুরতম দানব অপেক্ষ এই ঈশ্বর আরও নিষ্ঠুর। বেদান্ত বলেন, ঈশ্বর এই বৈষম্য ও প্রতিযোগিতার কারণ নহেন। তবে কে ইহা করিল ?—আমরা নিজেরাই করিয়াছি । মেঘ সকল ক্ষেত্রে সমানভাবে বৃষ্টি বর্ষণ করে। কিন্তু যে ক্ষেত্র উত্তমরূপে কৰ্ষিত, তাহাই শস্যশালী হয় ; যে ভূমি ভালভাবে কৰ্ষিত নহুে, তাহা ঐ বৃষ্টির ফল লাভ করিতে পারে না । ইহা মেঘের অপরাধ নহে তাহার দয়া অনন্ত অপরিবর্তনীয়—আমরাই কেবল এই বৈষম্য সৃষ্টি করিতেছি । কিরূপে আমরা এই বৈষম্য স্বষ্টি করিলাম ? কেহ জগতে সুখী হইয়া জন্মাইল, কেহ বা অসুখী – তাহারা তো এই বৈষম্য স্বষ্টি করে নাই ? করিয়াছে বই কি ! পুর্বজন্মকৃত কর্মের দ্বারা এই ভেদ—এই বৈষম্য হইয়াছে । এক্ষণে আমরা সেই দ্বিতীয় তত্বের আলোচনায় আসিলাম-যাহাতে শুধু আমরা হিন্দুর নহি, বৌদ্ধ ও জৈনগণও একমত। আমরা সকলেই স্বীকার করিয়া থাকি, হুষ্টির মতে জীবনও অনন্ত । শূন্ত হইতে যে জীবনের উৎপত্তি হইয়াছে, তাহা নহে—তাহা হইতেই পারে না । এইরূপ জীবনে কোন প্রয়োজনই নাই । কালে যাহার আরস্তু, কালে তাহার অন্ত হইবে । গতকল্য যদি জীবনের আরম্ভ হইয়া থাকে, তবে আগামী কল্য উহার শেষ হইবে—পরে উহার সম্পূর্ণ ধ্বংস হইবে । জীবন অবশ্ব পুর্বেও বর্তমান ছিল । আজকাল ইহা বেশী বুঝাইবার আবশ্বক নাই ? কারণ আধুনিক বিজ্ঞান এই বিষয়ে আমাদিগকে সাহায্য করিতেছে—জড়-জগতের আবিষ্কারগুলির সাহায্যে “আমাদের শাস্ত্রনিহিত তত্ত্বগুলি ব্যাপ্য করিতেছে । তোমরা সকলেই পূর্ব হইতেই অবগত আছ যে, আমাদের প্রত্যেকেই অনন্ত অতীতের কর্মসমষ্টির ফলস্বরূপ । কবিগণের বর্ণনানুযায়ী কোন শিশুকেই প্রকৃতি স্বহস্তে জগৎ-রঙ্গমঞ্চে লইয়া আসেন না, তাহার স্বন্ধে অনস্ত অতীতের কর্মসমষ্টি রহিয়াছে। ভালই হউক আর মন্দই হউক, সে নিজ অতীত কর্মের ফল ভোগ করিতে আসে। ইহা হইতেই বৈষম্যের উৎপত্তি । ইহাই কর্মবিধান ; আমরা প্রত্যেকেই নিজ নিজ অদৃষ্টের নিয়ামক। এই মতবাদের দ্বারা অদৃষ্টবাদ খণ্ডিত হয় এবুং ইহা দ্বারাই ঈশ্বরের বৈষম্য-নৈপ্পুর্ণ্য-দোযু নিরাকৃত হয়। আমরা যাহা কিছু ভোগ করি, তাহার জন্য আমরাই দায়ী, অপর কেহ নহে। আমরাই কার্য, আমরাই কারণস্বরূপ ; স্বতরাং আমরা স্বাধীন। যদি আমরা অসুখী হই, তবে বুঝিতে হইবে আমিই