পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (পঞ্চম খণ্ড).pdf/৩৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\రిచిJ স্বামীজীর বাণী ও রচনা নির্ভীকদৃষ্টিতে চাহিতেছে। এমন অদ্ভুত পরিবর্তন কিভাবে আসিল ? মনে কর, সে-ব্যক্তি আর্মেনিয়া বা অন্য কোন স্থান হইতে আসিতেছে—সেখানে কেহ তাহাকে গ্রাহ করিত না, সকলেই পিষিয়া ফেলিবার চেষ্টা করিত, সেখানে সকলেই তাহাকে বলিত –‘তুই জন্মেছিস্ গোলাম, থাকবি গোলাম, একটু যদি নড়তে চড়তে চেষ্টা করিস তো তোকে পিষে ফেলব ? চারিদিকের সবই যেন তাহাকে বলিত, গোলাম তুই, গোলাম আছিস—যা আছিস, তাই থাক । জন্মেছিলি যখন, তখন যে-নৈরাশ্বের অন্ধকারে জন্মেছিলি, সেই নৈরাশ্বের অন্ধকারে সারাজীবন পড়ে থাক।’ সেখানকার হাওয়া যেন তাহাকে গুনগুন করিয়া বলিত, “তোর কোন আশা নেই—গোলাম হইয়া চিরজীবন নৈরাশ্বের অন্ধকার পড়িয়া থাক্ । সেখানে বলবান ব্যক্তি তাহাকে পিষিয়া তাহার প্রাণ হরণ করিয়া লইতেছিল। আর যখনই সে জাহাজ হইতে নামিয়া নিউ ইয়র্কের রাস্তায় চলিতে লাগিল, সে দেখিল একজন ভালপোশাক-পরা ভদ্রলোক তাহার করমর্দন করিল। সে যে ছিন্নবস্ত্র-পরিহিত, আর ভদ্রলোকটি যে উত্তমবস্থধারী, তাহাতে কিছু আসে যায় না। আর একটু অগ্রসর হইয়া সে এক ভোজনাগারে গিয়া দেখিল, ভদ্রলোকের টেবিলে বসিয়া আহার করিতেছেন —সেই টেবিলেরই এক প্রাস্তে তাহাকে বসিতে বলা হইল । সে চারিদিকে ঘুরিতে লাগিল, দেখিল—এ এক নূতন জীবন ; সে দেখিল—এমন জায়গাও আছে, যেখানে আর পাচজন মানুষের ভিতরে সেও একজন মানুষ । হয়তো সে ওয়াশিংটনে গিয়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সহিত করমর্দন করিয়া আসিল, সেখানে হয়তো সে দেখিল দূরবর্তী পল্লীগ্রাম হইতে মলিন-বস্তুপরিহিত কৃষকেরা আসিয়া সকলেই প্রেসিডেণ্টের করমর্দন করিতেছে । তখন তাহার মায়ার আবরণ খসিয়া গেল । সে যে ব্ৰহ্ম—মায়াবশে এইরূপ দুর্বল দাসভাবাপন্ন হইয়াছিল! এখন সে আবার জাগিয়া উঠিয়া দেখিল—মকুন্তপুর্ণ জগতে সেও একজন মানুষ । আমাদের এই দেশে-বেদান্তের এই জন্মভূমিতে সাধারণ লোককে শত । শতাব্দী যাবৎ এইরূপ মায়াচক্রে ফেলিয়া এমন হীনভাবাপন্ন করিয়া ফেলা হইয়াছে। তাহাদের স্পর্শে অশুচি, তাহাদের সঙ্গে বসিলে অশুচি ! তাহাদিগকে বলা হইতেছে, নৈরাশ্বের অন্ধকারে তোদের জন্ম—থাক্‌ চিরকাল এই নৈরাতের অন্ধকারে । ফল এই হইয়াছে যে, সাধারণ লোক ক্রমশঃ