পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (পঞ্চম খণ্ড).pdf/৩৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৫২ স্বামীজীর বাণী ও রচনা মনোযোগ আকর্ষণ করিতে চাই—হে মানব, নিজের উপর বিশ্বাসী হও । এই উপায়েই কেবল আমরা ঈশ্বরে বিশ্বাসী হইতে পারি। তুমি অদ্বৈতবাদী হও বা দ্বৈতবাদী হও, তুমি যোগশাস্ত্রে বিশ্বাসী হও বা শঙ্করাচার্যে বিশ্বাসী হও, তুমি ব্যাস বা বিশ্বামিত্র যাহারই অনুবর্তী হও না কেন,তাহাতে বড় কিছু আসে যায় না, কিন্তু বিশেষ প্রণিধানের বিষয় এই যে, পূর্বোক্ত আত্মবিশ্বাস ব্যাপারে ভারতীয় ভাব সমগ্র পৃথিবীর অন্যান্য জাতির ভাব হইতে সম্পূর্ণ পৃথক। এক মুহূর্তের জন্য ভাবিয়া দেখ—অন্যান্য ধর্মে ও অন্যান্য দেশে আত্মার শক্তি সম্পূর্ণরূপে অস্বীকৃত হইয়া থাকে—আত্মাকে তাহার একরূপ শক্তিহীন দুর্বল নিশ্চেষ্ট জড়বং বিবেচনা করিয়া থাকে ; আমরা কিন্তু ভারতে আত্মাকে অনন্ত বলিয়া মনে করি, আর আমাদের ধারণা—উহা চিরকাল পূর্ণ থাকিবে । আমাদিগকে সর্বদা উপনিষদের শিক্ষা মনে রাখিতে হইবে । তোমাদের জীবনের মহান ব্রত স্মরণ কর । ভারতবাসী আমরা, বিশেষতঃ বাঙালীরা বহু পরিমাণে বৈদেশিক ভাব দ্বারা আক্রান্ত হইয়া পড়িয়াছি—উহ। আমাদের জাতীয় ধর্মের অস্থিমজ্জা পর্যন্ত চর্বণ করিয়া ফেলিতেছে । আমরা আজকাল এত পিছনে পড়িয়া গিয়াছি কেন ? আমাদের মধ্যে শতকরা নিরানব্বই জন কেন সম্পূর্ণরূপে পাশ্চাত্য ভাব ও উপাদানে গঠিত হইয়া পডিয়াছে ? যদি আমরা জাতীয় গৌরবের উচ্চ শিখরে আরোহণ করিতে চাই, তবে পাশ্চাত্য অনুকরণ দূরে ফেলিয়া দিতে হইবে ; যদি আমরা উঠিতে চাই, তবে ইহাও আমাদিগকে স্মরণ রাখিতে হইবে যে, পাশ্চাত্য দেশ হইতে আমাদের অনেক শিথিবীর আছে। পাশ্চাত্যদেশ হইতে আমাদিগকে তাহাদের শিল্পবিজ্ঞান—বহিঃপ্রকৃতি-সম্বন্ধীয় বিজ্ঞানসমূহ শিখিতে হইবে, আবার পাশ্চাত্যদিগকে আমাদের নিকট আসিয়। ধর্ম ও অধ্যাত্মবিদ্যা শিক্ষণ ও আয়ত্ত করিতে হইবে । আমাদিগকে –হিন্দুগণকে বিশ্বাস করিতে হইবে যে, আমরাই জগতের আচার্য । আমরা এখানে রাজনীতিক অধিকার ও এইরূপ অন্যান্য অনেক বিষয়ের জন্য চীংকার করিয়া আসিতেছি । বেশ কথা ; কিন্তু অধিকার, সুবিধা, এ-সকল কেবল বন্ধুত্বের ফলেই লাভ করা যায়, আর বন্ধুত্বও কেবল দুইজন সমান সমান ব্যক্তির ভিতর আশা করা যাইতে পারে। এক পক্ষ যদি চিরকালই ভিক্ষা করিতে থাকে, তবে আর তাহদের মধ্যে পরস্পর কি বন্ধুত্ব হইতে পারে? ও সব কু মুগে বল সহজ, কিন্তু আমি বলিতেছি যে, পরস্পর সাহায্য