পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (পঞ্চম খণ্ড).pdf/৪১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভারতের রীতিনীতি 8 ovo, এবং তার স্বদেশের জাতিভেদ, লোকের আচার-ব্যবহার ও ভাষার বিভিন্নতা সম্বন্ধে আলোচনা করতে প্রবৃত্ত হলেন : মুলত: উত্তরভারতে চারটি ভাষা এবং দক্ষিণভারতে চারটি, কিন্তু ধর্ম উভয়ত্র এক । ত্রিশ কোটি লোকের মধ্যে পাচ ভাগের চার ভাগই হিন্দু এবং এই হিন্দু জাতিটি কিছুট। অদ্ভুত। ধর্মীয় রীতি অনুসারে হিন্দু সব কাজ করে ; ধর্মনিষ্ঠার সঙ্গে সে আহার করে, প্রত্যুষে শয্যা ত্যাগ করে, ধর্মের নির্দেশ অনুসারে সে সৎকর্ম করে এবং অসৎ কাজও করে ধর্মভাবে । এই সময়ে বক্তা র্তার ভাষণের শ্রেষ্ঠ নৈতিক সার কথাটি উল্লেখ করেন । তিনি বলেন : তার স্বদেশবাসীদের বিশ্বাস—সকল স্বার্থশূন্য কাজই সং এবং সকল স্বার্থপরতাই অসং । অতএব হিন্দুর মতে নিজের জন্য গৃহনির্মাণ স্বার্থপরতা; হিন্দু গৃহনির্মাণ করে ঈশ্বরোপাসনা এবং অতিথিসেবার জন্য । নিজের জন্য আহার্য-রন্ধন স্বার্থপরতা ; তাই সে রন্ধন করে দরিদ্রসেবার জন্য ; যদি কোন ক্ষুধার্ত আগন্তুক প্রার্থী আসে, তবে আগে তার সেবা ক’রে অবশেষে সে নিজে আহার্য গ্রহণ করে—এই ভাবটি দেশের সর্বত্র বিরাজ করছে। যে কেউ খাদ্য ও আশ্রয়ের প্রার্থী হোক না কেন, সব দরজাই তার জন্য থোল থাকবে । জাতিভেদ-প্রথার সঙ্গে ধর্মের কোন সম্পর্ক নেই । লোকের বৃত্তি বংশগত —একজন ছুতোর-মিস্ত্রীর ছেলে ছুতোর হয়েই জন্মায় ; স্বর্ণকারের ছেলে স্বর্ণকার, কারিগরের ছেলে কারিগর, এবং পুরোহিতের ছেলে পুরোহিত । তবে এই সামাজিক দোষ-ত্রুটি অপেক্ষাকৃত আধুনিক কালের, এ প্রায় এক হাজার বছর ধরে চলে আসছে মাত্র ; কালের এই পরিমাণ ভারতে খুব দীর্ঘ বলে বিবেচিত হয় না, যেমন মনে করা হয় এদেশে বা অন্ত সকল দেশে । দু-রকমের দান বিশেষভাবে সমাদৃত-শিক্ষাদান এবং প্রাণদান । কিন্তু শিক্ষাদানই অগ্রাধিকার লাভ করে। একজন মানুষের জীবন রক্ষা করা খুব ভাল ; তাকে শিক্ষাদান করা তার চেয়েও ভাল । অর্থের বিনিময়ে শিক্ষা দেওয়া গৰ্হিত কাজ এবং যে-ব্যক্তি ব্যবসার সামগ্রীর মতে শিক্ষার বিনিময়ে কাঞ্চন গ্রহণ করে, তার উপর ধিক্কার বর্ষিত হয়। সরকার মাঝে মাঝে শিক্ষকদের সাহায্য ক’রে থাকেম। তার ফলে তথাকথিত সভ্যদেশগুলিতে যে-পরিবেশ বজায় আছে, এখানে নৈতিক ফলাফুল তার চেয়ে শুভকর হয়েছে।