পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (পঞ্চম খণ্ড).pdf/৪৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভারতে শিল্পচর্চা ষ্ঠান ফ্রানদিঙ্ক শহরে অবস্থিত ওয়েও সভাগৃহে স্বামী বিবেকানন্দ ভারতীয় কলাবিদ্যা ও বিজ্ঞান সম্পর্কে বক্তৃতা করিবেন—এই মর্মে শ্রোতাদের সমক্ষে উহাকে পরিচিত করিয়া দেওয়া হয় । স্বামীজীর বক্তৃতার কিছু অংশ ; বিভিন্ন জাতির ইতিহাসে দেখা যায়, প্রথমে শাসন-যন্ত্র সব সময়েই পুরোহিতগণের অধিকারে, ছিল । সমগ্র জ্ঞানভাণ্ডারেরও উৎস ছিল পুরোহিতশ্রেণী । অতঃপর পুরোহিতগণের নিকট হইতে শাসন-ক্ষমতা হস্তান্তরিত হইয় ক্ষত্রিয় অথবা রাজশক্তির শাসন প্রবতিত হয় এবং সামরিক শাসন প্রাধান্ত লাভ করে । সর্বদাই এইরূপ ঘটিয়াছে । পরিশেষে ভোগবিলাসের কবলে পড়িয়া জনসাধারণ অধ:পতিত হয় এবং অধিকতর শক্তিশালী ও বর্বর জাতির অধীন হইয়া যায়। সমগ্র মানবজাতির মধ্যে ইতিহাসের আদিকাল হইতে ভারতবর্ষ ‘জ্ঞানের দেশ’ বলিয়া অভিহিত হইয়াছে। ভারতবর্ষ কখনও অন্তজাতিকে জয় করিবার অভিপ্রায়ে অভিযানে বাহির হয় নাই। এই দেশের অধিবাসিগণ কোনদিনই যোদ্ধা নয় । আপনাদের—পাশ্চাত্যদের মতো তাহারা কখনও মাংস ভক্ষণ করে না, কারণ মাংসই যোদ্ধা স্বষ্টি করে ; প্রাণীর রক্ত আপনাদের চঞ্চল করিয়া তোলে এবং আপনারী কিছু একটা করিবার ইচ্ছা করেন । এলিজাবেথের সময়কার ইংলণ্ডের সহিত ভারতের তুলনা করুন। আপনাদের "জাতির পক্ষে সেটি কি অন্ধুকার-যুগই ছিল, আর আমরা তখনও কত জ্ঞানে উন্নত ছিলাম ! এংলো-স্যাক্সন জাতির কলাবিদ্যাচর্চার যোগ্যতা এ পর্যন্ত খুবই কম । তাহদের উত্তম কাব্য আছে—দৃষ্টান্তরূপে বলা যাইতে পাবে, সেক্সপুরের অমিত্রাক্ষর ছন্দ কি অপুর্ব ! শুধু ছন্দের মিল ঘটানোই কিছু নয়। ছন্দের মিলই সর্বাপেক্ষা উন্নত রুচির বস্তু নয় । ভারতবর্ষে বহুযুগ পূর্বে সঙ্গীত পুর্ণ সপ্ত-স্বরে, এমন কি অর্ধ ও চতুর্থাংশ মুরে বিকশিত হইয়াছিল। ভারতবর্ষ অতীতে সঙ্গীত, নাটক ও ভাস্কর্ষে অগ্রণী ছিল । বর্তমানে যাহা কিছু করা হইতেছে, সবই অনুকরণের চেষ্টা মাত্র । বাচিয়া থাকিবাৱ জন্য মানুষের প্রয়োজন কত অল্প—এই প্রশ্নের উপরই বর্তমান ভারতের সব কিছু নির্ভর করে। '