পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (পঞ্চম খণ্ড).pdf/৪৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভারতের নারী 89) তিমি, যিনি আমার প্রয়োজন হইলে বার বার জীবন দিতে প্রস্তুত ? কোথায় তিনি, আমুার প্রতি যাহার স্নেহ অফুরন্ত–তা আমি যতই দুষ্ট ও হীনপ্রকৃতি হই মা কেন ? কোথায় সেই জননী—আর কোথায় স্ত্র, যে নারী স্বামীর দ্বারা সামান্ত অবহেলিত হইলে বিবাহ-বিচ্ছেদের জন্য আদালতের আশ্রয় লয় ? আহে মার্কিন মহিলাবৃন্দ, আপনাদের ভিতর কোথায় সেই জননী ? আপনাদের দেশে তাহাকে আমি খুজিয়া পাই না। আপনাদের দেশে আমি এমন পুত্ৰ দেখি নাই, যাহার কাছে জননীর স্থান সর্বপ্রথম । যখন আমরা দেহত্যাগ করি, তখনও আমরা চুই না যে, আমাদের স্ত্রী-পুত্ৰ-কন্যারা আমাদের জননীর স্থান গ্রহণ করে । ধন্য আমাদের জননী! যদি মায়ের পুর্বে আমাদের মৃত্যু হয়, তাহা হইলে আবার মায়ের কোলেই মাথা রাখিয়া আমরা মরিতে চাই । কোথায় নারী ? নারী কি এমনই একটি শব্দ, যাহা কেবল স্কুল দেহের সঙ্গে যুক্ত ? "হিন্দু-মন সেই সব আদর্শকে ভয় করে, যেগুলি অনুসারে দেহ দেহেই আসক্ত হইবে । না, না! নারী, দেহ-সংক্রান্ত কোন কিছুর সহিত তুমি যুক্ত হইবে না । তোমার নাম চিরকালের জন্য পবিত্র বলিয়া অভিহিত করা হইয়াছে। ‘মা’-নাম ছাড়া এমন কি শব্দ অাছে, যাহাকে কোনপ্রকার কামভাব ম্পর্শ করিতে পারে না, কোনপ্রকার পশুভাব যাহার নিকটে আসিতে পারে না ? এই মাতৃত্বই ভারতবর্ষের আদর্শ । আমি এমন এক সম্প্রদায়ভুক্ত, যাহারা অনেকট আপনাদের রোমান ক্যাথলিক চার্চের ভিক্ষুক সাধুদের মতো। অর্থাৎ আমাদের পোশাক-পরিচ্ছদ সম্বন্ধে উদাসীন হইয়া ঘুরিয়ু বেড়াইতে হয়, ভিক্ষারে জীবনধারণ করিতে হয়, জনসাধারণ যখন চায়, তখন ধর্মকথা শুনাইতে হয় । যেখানে আশ্রয় পাই, সেখানে ঘুমাই। আমাদিগকে এই-ধরনের জীবনপদ্ধতি অনুসরণ করিতে হয়। আমাদের সন্ন্যাসী-সম্প্রদায়ের নিয়ম এই যে, প্রত্যেক নারীকে এমন কি ক্ষুদ্র বালিকাকেও ’মা’ সম্বোধন করিতে হয় । ইহাই আমাদের প্রথা । পাশ্চাত্যে আসিয়াও আমার পুরাতন অভ্যাস ছাড়িতে পারি নাই। মহিলাদের ‘মা’ বলিয়া সম্বোধন করিলে দেখিতাম, তাহারা অত্যন্ত আতঙ্কিত হইয়া উঠিতেন। প্রথম প্রথম ইহার কারণ বুঝিতে পারি নাই। পরে কারণ আবিষ্কার করিলাম। বুঝিলাম ‘মা’. হইলে তাহারা যে “বুড়ী’ হইয়া যাইবেন । ভারতে নারীর আদর্শ মাতৃত্ব—সেই অপূর্ব, স্বার্থশূন্ত, সৰ্বংসহ, নিত্য ক্ষমাশীল জননী।