পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (পঞ্চম খণ্ড).pdf/৪৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

88 o স্বামীজীর বাণী ও রচনা এবং দুহিতা’ শব্দটি দোহন করা অর্থে 'দুহ ধাতু হইতে উৎপন্ন হইয়াছে। ‘দুহিতা’র প্রকৃত অর্থ হইতেছে দোহনকারিণী। পরে ‘দুহিতা’ শব্দটির একটি নূতন অর্থ আবিষ্কৃত হইয়াছে। দোহনকারিণী—দুহিতা পরিবারের সমস্ত দুগ্ধ’ দোহন করিয়া লইয়া যায়, ইহাই হইল দ্বিতীয় অর্থ। r. - ভারতীয় নারী যে-সকল বিভিন্ন সম্পর্কে সম্বদ্ধ, সেগুলি বর্ণনা করিলাম । আমি আপনাদের পুর্বে বলিয়াছি যে, হিন্দুসমাজে জননীর স্থান সর্বোচ্চ, তাহার পর জায়া এবং ইহাদের পর কন্যা। এই পর্যায়ের ক্রম অত্যন্ত দুরূহ ও জটিল । বহু বংসর সে-দেশে বাস করিয়াও কোন বিদেশী ইহা বুঝিতে পারেন না। উদাহরণ-স্বরূপ, আমাদের ভাষায় ব্যক্তিবাচক ‘সর্বনামে’র তিনটি রূপ আছে । ঐগুলি অনেকটা ‘ক্রিয়া’র মতে কাজ করে। একটি খুবই সম্মানসূচক, দ্বিতীয়টি মধ্যম এবং সর্বনিম্নটি অনেকটা ইংরেজীর দাউ (thou ) ও দী ( thee )-র মতো। শিশু এবং ভূতাদের সম্পর্কে শেষেরটি প্রয়োগ করা হয় । মধ্যমটি সমান সমান লোকের মধ্যে ব্যবহৃত হয় । সুতরাং দেখিতেছেন যে, আত্মীয়তার সর্বপ্রকার জটিল সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই সর্বনামগুলি ব্যবহার করিতে হয় । উদাহরণ-স্বরূপ, আমার জ্যেষ্ঠ ভগ্নীকে আজীবন আমি আপনি বলিয়া সম্বোধন করি, কিন্তু তিনি কখন আমাকে আপনি বলিবেন না, তিনি আমাকে ‘তুমি’ বলিবেন, ভুলক্রমেও তিনি আমাকে ‘আপনি বলিবেন না ; যদি বলেন, তাহাতে অমঙ্গল বুঝিতে হইবে। t গুরুজনদের প্রতি ভালবাসা বা শ্রদ্ধা প্রকাশ করিতে হইলে সেইরূপ, সর্বদা ঐপ্রকার ভাষাতেই করিতে হইবে। পিতামাতাকে তো দূরের কথা, বড় ভাই বা বোনকেও 'তু’, ‘তুম্‌ বা ‘তুমি বলিয়া ডাকিতে আমার সাহসই হইবে না। আর মাতাপিতার নাম ধরিয়া আমরা কখনই ডাকি না। যখন আপনাদের দেশের প্রথা জানিতাম না, তখন একটি খুবই মার্জিত-রুচি পরিবারে পুত্রকে জননীর নাম ধরিয়া ডাকিতে দেখিয়া আমি গভীরভাবে মর্মাহত হইয়াছিলাম। যাহা হউক, পরে অভ্যস্ত হইয়া গিয়াছি। বুঝিলাম, ইহাই এ-দেশের রীতি। কিন্তু আমাদের দেশে আমরা কখনই পিতামাতার উপস্থিতিতে র্তাহাদের নাম উচ্চারণ করি না । এমন কি তাহাদের সামনেও ‘প্রথম পুরুষের বহুবচনে উল্লেখ করি। এইরূপে আমরা দেখি যে, ভারতীয় নারী-পুরুষের সমাজ-জীবনে এবং সম্পর্কের তারতম্যেজটিলতম জাল বিস্তৃত হইয়া রহিয়াছে। আমাদের দেশে