পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (পঞ্চম খণ্ড).pdf/৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রামনাদ অভিনন্দনের উত্তর 8豊 জীবনের অনুভূতি, তাহার জীবন কতকগুলি ইন্দ্রিয়মুখের সমষ্টিমাত্র। প্রত্যেক সমাজে শিশুর মতো অবোধ মানুষ আছে। সংসারের অসারত বুঝিতে হইলে প্রথমে তাহাদিগকে কিছু সুখভোগের অভিজ্ঞতা অর্জন করিতে হইবে —তবেই তাহারা বৈরাগ্যলাভে সমর্থ হইবে। আমাদের শাস্ত্রে ইহার জন্য যথেষ্ট ব্যবস্থা রহিয়াছে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, পরবর্তী কালে সমাজের প্রত্যেকটি মানুষকে সন্ন্যাসীদের নিয়মে বধিবার একটা বিশেষ ঝোক দেখা গিয়াছে । ইহা মহা ভুল। ভারতে যে দুঃখদারিদ্র্য দেখা যাইতেছে, তাহ অনেকটা এই কারণেই হইয়াছে । দরিদ্র ব্যক্তিকে নানাবিধ আধ্যাত্মিক ও নৈতিক নিয়মে বাধা হইয়াছে ; তাঙ্গর পক্ষে এগুলির কোন প্রয়োজনীয়তা নাই । তাহার কার্যের উপর হস্তক্ষেপ না করিয়া হাত গুটাইয়। লও দেখি । বেচার একটু মুখভোগ করিয়া লউক । দেখিবে, সে ক্রমশঃ উন্নত হইবে।--ত্রমশঃ তাহার মধ্যে ত্যাগের ভাব আপনাআপনি আসিবে । হে ভদ্রমহোদয়গণ, ভোগের ব্যাপারে কিরূপে সফলতা লাভ করা যায়, আমরা পাশ্চাত্য জাতির নিকট সে সম্বন্ধে কিঞ্চিং শিখিতে পারি। কিন্তু অতি সাবধানে এই শিক্ষা গ্রহণ করিতে হইবে । অত্যন্ত দুঃখেব সহিত আমাকে বলিতে হইতেছে, আজকাল আমরা পাশ্চাত্যশিক্ষায় শিক্ষিত যে-সকল ব্যক্তি দেখিতে পাই, তাহাদের প্রায় কাহারও জীবন বড় আশা প্রদ নহে । এখন আমাদের একদিকে প্রাচীন হিন্দু-সমাজ, অপব দিকে আধুনিক ইওরোপীয় সভ্যতা। এই দুষ্টটির মধ্যে আমি প্রাচীন হিন্দু-সমাজকেই বাছিয়া লইব । কারণ সেকেলে হিন্দু অজ্ঞ হইলেও, কুসংস্কারাচ্ছন্ন হইলেও তাহার একটা বিশ্বাস আছে—সেই জোরে সে নিজের পায়ে দাড়াইতে পারে ; কিন্তু পাশ্চাত্যভাবাপন্ন ব্যক্তি একেবারে মেরুদণ্ডহীন, সে চারিদিক হইতে কতকগুলি এলোমেলো ভাব পাইয়াছে—তাহাদের মধ্যে সামঞ্জস্য নাই, শৃঙ্খলা নাই ; সেগুলিকে সে অfপনার করিয়া লইতে পারে নাই, কতকগুলি ভাবের বদহজম হইয়া সামঞ্জস্যহীন হইয়াছে। সে নিজের পায়ের উপর দণ্ডায়মান নয় —তাহার মাথা বো বেঁা করিয়া এদিক ওদিক ঘুরিতেছে। সে যাহা কিছু করে, তাহার প্রেরণা-শক্তি কোথায় ? ইংল্লজ কিসে তাহার পিঠ চাপড়াইয়৷ দুটা বাহবা দিবে, ইহাই তাহার সকল কাজের অভিসন্ধির মূলে । সে যে সমাজসংস্কারে অগ্রসর হয়, সে যে আমাদের কতকগুলি সামাজিক প্রথার বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ করে, তাহার কারণ—