পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (প্রথম খণ্ড).pdf/১২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরোপকারে নিজেরই উপকার } e \ আমরা খুব বেশী কী করিতে পারি ?—একটা হাসপাতাল, রাস্ত বা দাতব্য আশ্রম নির্মাণ করিতে পারি গরীব দুঃখীকে সাহায্য করিবার জন্য হয়তে। আমরা বিশ-ত্রিশ লক্ষ টাকা সংগ্ৰহ করিতে পারি, তাহার মধ্যে দশ লক্ষ টাকায় একটা হাসপাতাল খুলিতে পারি, দশ লক্ষ টাকা নাচ-তামাসা-মদে খরচ করিতে পারি এবং দশ লক্ষের অর্ধেক কর্মচারীরা চুরি করিতে পারে এবং অবশিষ্ট অংশ হয়তো গরীবদের কাছে পৌছিল। কিন্তু তাহাতেই বা হইল কি ? এক ঝটকায় পাচ মিনিটে সব উড়িয়া যাইতে পারে। তবে করিব কি ? এক আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতে রাস্তা, হাসপাতাল, নগর, বাড়ি সব উড়িয়া যাইতে পারে। অতএব এস, জগতের উপকার করিব—এই অজ্ঞানের কথা একেবারে পরিত্যাগ করি। জগৎ তোমার বা আমার সাহায্যের জন্ত অপেক্ষা করিতেছে না। তথাপি আমাদিগকে কার্য করিতে হইবে, সর্বদাই লোকের উপকার করিতে হইবে, কারণ উহা অামাদের পক্ষে এক আশীৰ্বাদস্বরূপ। কেবল এই উপায়েই আমরা পূর্ণ হইতে পারি। আমরা যে-সব ভিখারীদের সাহায্য করি, তাহারা কেহই আমাদের এক পয়সা ধারে ন ; আমরাই তাহদের নিকট ঋণী, কারণ সে তাহার উপর আমাদের দয়াবৃত্তি অনুশীলন করিতে অনুমতি দিয়াছে। আমরা জগতের কিছু উপকার করিয়াছি বা করিতে পারি, অথবা অমুক অমুক লোককে সাহায্য করিয়াছি— এরূপ চিন্তা করা সম্পূর্ণ ভূল। ইহা মূর্থের চিস্তা, আর ঐরূপ চিন্তা দুঃখজনক। আমরা মনে করি, আমরা কাহাকেও সাহায্য করিয়াছি ; এবং আশা করি, সে আমাকে ধন্যবাদ দিবে ; আর সে ধন্যবাদ না দিলে আমরা মনে কষ্ট পাই। আমাদের কৃত উপকারের জন্য কেন আমরা প্রতিদান আশা করিব ? যাহাকে সাহায্য করিতেছ, তাহার প্রতি কৃতজ্ঞ হও, তাহাতে ঈশ্বর-বুদ্ধি কর। মানুষকে সাহায্য করিয়া ঈশ্বরের উপাসনা করিতে পাওয়া কি আমাদের মহাসৌভাগ্য নয় ? যদি আমরা বাস্তবিক অনাসক্ত হইতাম, তবে এই থৈা আশীজনিত কষ্ট এড়াইতে পারিতাম এবং সানন্দে জগতে কিছু ভাল কাজ করিতে পারিতাম। আসক্তিশূন্ত হইয়া কাজ করিলে অশাস্তি বা দুঃখ কখনই আসিবে না। এই জগৎ সুখ-দুঃখ লইয়া অনন্তকাল চলিতে থাকিবে এবং আমরা উহাকে সাহায্য করিবার জন্য কিছু করি বা না করি, তাহাতে 'কছুই আসে যায় না। দৃষ্টান্তস্বরূপ একটি গল্প বলিতেছি :