পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (প্রথম খণ্ড).pdf/১২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরোপকারে নিজেরই উপকার } e \o ফেলিব।’ ভূতকে আর কি কাজ দিবে ভাবিয়া না পাইয়া বেচার। অতিশয় ভয় পাইল। ভয়ে দৌড়াইতে দৌড়াইতে সাধুর নিকট পৌঁছিয়া বলিল, প্রভু, আমাকে রক্ষা করুন।' সাধু জিজ্ঞাসা করিলেন, ‘ব্যাপার কি ? লোকটি বলিল, ‘ভূতকে আমি আর কিছু কাজ দিতে পারিতেছি না। আমি যা বলি, তাই সে মুহূর্তের মধ্যে সম্পন্ন করিয়া ফেলে ; আর যদি তাহাকে কাজ না দিই, তাহা হইলে আমাকে খাইয়া ফেলিবে বলিয়া ভয় দেখাইতেছে।’ ঠিক তখনই তোমাকে খাইয়া ফেলিব।’ বলিতে বলিতে ভূত আসিয়া হাজির হইল। খায় আর কি ! লোকটি ভয়ে থর-থর করিয়া কঁাপিতে লাগিল, এবং তাহার জীবন-রক্ষার জন্য সাধুর নিকট প্রার্থনা করিতে লাগিল। সাধু বলিলেন, ‘আচ্ছা, তোমার একটি উপায় করিতেছি ; ঐ কুকুরটির দিকে চাহিয়া দেখ—উহার বাকা লেজ । শীঘ্র তরবারি বাহির করিয়া উহার লেজটি কাটো, তারপর ভূতটিকে উহা সোজা করিতে দাও।’ লোকটি কুকুরের লেজ কাটিয়া ভূতকে দিয়া বলিল, “ইহা সোজা করিয়া দাও। ভূত উহ! লইয়া ধীরে ধীরে অতি সন্তপণে সোজা করিল, কিন্তু যেমনি ছাড়িয়া দিল, অমনি উহা গুটাইয়া গেল। আবার সে অনেক পরিশ্রম করিয়া লেজটি সোজা করিল—ছাড়িয়া দিতেই উহা গুটাইয়া গেল। আবার সে ধৈয সহকারে লেজটি সোজা করিল, কিন্তু ছাড়িয়া দিবামাত্র উহ। বাকিয়া গেল । এইরূপে দিনের পর দিন সে পরিশ্রম করিতে লাগিল । অবশেষে ক্লাস্ত হইয়। বলিতে লাগিল, ‘জীবনে কখনও এমন যন্ত্রণায় পড়ি নাই । আমি পুরাতন পাকা ভূত, কিন্তু জীবনে কখনও এমন বিপদে পড়ি নাই’। অবশেষে লোকটিকে বলিল, “এস তোমার সঙ্গে আপোস করি। তুমি আমাকে ছাড়িয়া দাও, আমিও তোমাকে যাহ। যাহা দিয়াছি সবই রাখিতে দিব, এবং প্রতিজ্ঞ করিব—কখনও তোমার অনিষ্ট করিব না। লোকটি খুব সন্তুষ্ট হইয়। আনন্দের সহিত এই চুক্তি স্বীকার করিল। এই জগৎটা কুকুরের কোকড়ানো লেজের মতো ; মানুষ শত শত বৎসর যাবৎ ইহ। সোজা করিবার চেষ্টা করিতেছে, কিন্তু যখনই একটু ছাড়িয়া দেয়, তখনই উহ। আবার গুটাইয়া যায়। অন্যথা আর কিরূপ হইবে ? প্রথমেই জানা উচিত, আসক্তিশূন্ত হইয়া কি ভাবে কাজ করিতে হয় ; তাহা হইলেই আর গোড়ামি আসিবে না। যখন আমরা জানিতে পারি, এই জগৎ কুকুরের