পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (প্রথম খণ্ড).pdf/১৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

为及8 স্বামীজীর বাণী ও রচনা কখনও স্বাধীন হইতে পারে না। অন্যান্য বস্তু ইহার উপর ক্রিয়া করে এবং ইহাও আবার অপরের কারণ হয়, এইরূপ চলিতেছে। যাহা পূর্বে ইচ্ছা! ছিল না, কিন্তু ইচ্ছারূপে পরিণত হয়, যাহা এই দেশ-কাল-নিমিত্তের ছাচে পড়িয়া মানুষের ইচ্ছারূপে পরিণত হইয়াছে, তাহা মুক্তস্বভাব ; আর যখন এই ইচ্ছ। কার্য-কারণ-চক্র হইতে বাহির হইয়া যাইবে, তখন আবার স্বাধীন বা মুক্ত হইবে। স্বাধীনতা বা মুক্তি হইতেই উহা আসে, এই বন্ধনের ছাচে পড়ে এবং বাহির হইয়া আবার মুক্ত হয়। প্রশ্ন উঠিয়াছিল, জগং কোথা হইতে আসে, কোথায় অবস্থান করে এবং কিসেই বা লীন হয় ? উত্তরও প্রদত্ত হইয়াছে—মুক্তি হইতেই ইহার উৎপত্তি, বন্ধনে ইহার স্থিতি এবং অবশেষে মুক্তিতেই প্রত্যাবতন। সুতরাং যখন আমরা বলি, মানুষ সেই অনন্ত সত্তার প্রকাশ, তখন বুঝিতে হইবে সেই সত্তার অতি ক্ষুদ্র অংশ মানুষ । এই দেহ ও এই মন—যাহা আমরা দেখিতেছি, এগুলি সমগ্রের অংশমাত্র, সেই অনন্ত পুরুষের একটি বিন্দুমাত্র । সমুদয় ব্রহ্মাওই সেই অনন্ত পুরুষের একটি কণামাত্র। আর আমাদের সকল নিয়ম ও বন্ধন, আনন্দ ও বিষাদ, আমাদের মুখ ও আশা—সবই এই ক্ষুদ্র জগতের ভিতরে। আমাদের উন্নতি ও অবনতি সবই এই ক্ষুদ্র জগতে সীমাবদ্ধ। অতএব দেখিতেছ, আমাদের মনের স্বষ্টি এই ক্ষুদ্র জগৎ চিরকাল থাকিবে—এরূপ আশা করা এবং স্বর্গে যাইবার আকাঙ্ক্ষা করা কি ছেলেমাকুষি ! স্বর্গের অর্থ—আমাদের পরিচিত এই জগতের পুনরাবৃত্তিমাত্র। স্পষ্টই দেখিতেছ, অনন্ত সত্তাকে আমাদের সীমাবদ্ধ জগতের অনুরূপ করিতে চেষ্টা করা কি ছেলেমামুষি ও অসম্ভব বাসন ! অতএব যখন মামুষ বলে, সে এইভাবেই চিরদিন থাকিবে, এখন যাহা লইয়া আছে, তাহ লইয়াই চিরদিন থাকিবে, অথবা আমি যেমন-কখন কখন বলি, যখন মানুষ ‘আরামের ধর্ম’ চায়, তখন তোমরা নিশ্চয় জানিও—তাহার এত অবনতি হইয়াছে যে, সে বর্তমান অবস্থা অপেক্ষা উন্নততর কিছুই ধারণা করিতে পারে না ; সে নিজের অনন্ত স্বরূপ ভুলিয়াছে ; তাহার সমগ্র চিস্ত। এইসব ক্ষুদ্র মুখ-দুঃখ এবং সাময়িক ঈর্ষায় আবদ্ধ। এই সান্ত জগৎকেই সে অনন্ত বলিয় মনে করে। শুধু তাই নয়, সে এই মূখত কোনমতে ছাড়িবে না। সে প্রাণপণে ‘তৃষ্ণা"কে—জীবনবাসনাকে. আঁকড়াইয় থাকে। বৌদ্ধের ইহাকে তঞহ বা তিস্সা' বলে।