পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (প্রথম খণ্ড).pdf/১৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S SU স্বামীজীর বাণী ও রচন। ত্যাগের দুইটি উপায় কথিত হইয়াছে। একটিকে বলে নিবৃত্তিমাৰ্গ—উহাতে ‘নেতি নেতি’ ( ইহা নয়, ইহা নয় ) করিয়া সব ত্যাগ করিতে হয় ; আর একটিকে বলে প্রবৃত্তিমাৰ্গ—উহাতে ‘ইতি ইতি’ করিয়া সকল বস্তু গ্রহণ করিয়া তাহার পর ত্যাগ করা হয়। নিবৃত্তিমাৰ্গ অতি কঠিন। উহা কেবল উন্নতমনা অসাধারণ প্রবল-ইচ্ছাশক্তিসম্পন্ন মহাপুরুষদের পক্ষেই সম্ভব। র্তাহার শুধু বলেন, না, আমি ইহা চাই না ; শরীর ও মন তাহদের আজ্ঞা পালন করে, এবং তাহারা সাফল্যমণ্ডিত হন । কিন্তু এরূপ মানুষ অতি বিরল। অধিকাংশ লোক তাই প্রবৃত্তিমাৰ্গ—সংসারেরই পথ বাছিয়া লয় ; এবং বন্ধনগুলিকেই ঐ বন্ধন ভাঙিবার উপায়রূপে ব্যবহার করে। ইহাও একপ্রকার ত্যাগ, তবে ধীরে ধীরে—ক্রমশঃ ত্যাগ করা হয় । সমস্ত পদার্থকে জানিয়া, ভোগ করিয়া, এইরূপে অভিজ্ঞতা লাভ করিয়া, সংসারের সকল বস্তুর প্রকৃতি অবগত হইয়৷ মন অবশেষে ঐগুলি ছাড়িয়া দেয় এবং অনাসক্ত হয়। অনাসক্তি-লাভের প্রথমোক্ত মার্গের সাধন–বিচার, আর শেষোক্ত পথের সাধন-কর্ম ও অভিজ্ঞতা। প্রথমটি জ্ঞানযোগের পথ, কোন প্রকার কর্ম করিতে অস্বীকার করাই এ পথের বৈশিষ্ট্য। দ্বিতীয়টি কর্মযোগের পথ, এ পথে কর্মের বিরতি নাই। এই জগতে প্রত্যেক ব্যক্তিকেই কর্ম করিতে হইবে । কেবল যাহার সম্পূর্ণরূপে আত্মতৃপ্ত, যাহারা আত্মা ব্যতীত আর কিছুই চান না, যাহাঙ্গের মন কখনও আত্মা হইতে অন্যত্র গমন করে না, আত্মাই যাহাদের সর্বস্ব, শুধু র্তাহারাই কর্ম করিবেন না । * অবশিষ্ট সকলকে অবশুই কর্ম করিতে হইবে । একটি জলস্রোত স্বচ্ছন্দগতিতে নামিতেছে। একটি গর্তের ভিতর পড়িয়া ঘূর্ণিরূপে পরিণত হইল ; সেখানে কিছুকাল ঘুরিবার পর উই; আবার সেই উন্মুক্ত স্রোতের আকারে বাহির হইয়া দুর্বারবেগে প্রবাহিত হয়। প্রত্যেক মহা-জীবন এই প্রবাহের মতো। উহাও ঘূর্ণির মধ্যে পড়ে—নাম-রূপাত্মক জগতের ভিতর পড়িয়া হাবুডুবু খায়, কিছুক্ষণ ‘আমার পিতা, আমার মাতা, আমার নাম, আমার যশ প্রভৃতি বলিয়া চীৎকার করে, অবশেষে বাহির হইয়া নিজের মুক্ত-ভাব ফিরিয়া পায়। সমুদয় জগৎ ইহাই করিতেছে, আমরা জানি বা নাই জানি, জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতসারে தி ১ তুলনীয় : গীত, ৩১৭