পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (প্রথম খণ্ড).pdf/১৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মুক্তি , ኃ:ፃ আমরা সকলেই জগৎব্রুপ স্বপ্ন হইতে বাহির হইবার জন্ত কাজ করিতেছি । সংসার-আবর্ত হইতে মুক্ত হওয়ার জন্যই মাহুষের এই সাংসারিক অভিজ্ঞতা। কর্মযোগ কি ?–কর্ম-রহষ্ঠ অবগত হওয়াই কর্মযোগ। আমরা দেখিতেছি সমুদয় জগৎ কর্ম করিতেছে। কিসের জন্য ? মুক্তির জন্য, স্বাধীনতা লাভের জন্য। পরমাণু হইতে মহোচ্চ প্রাণী পর্যন্ত সকলেই জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতসারে সেই এক উদ্দেশ্যে কর্ম করিয়া চলিয়াছে, সেই উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য—মনের স্বাধীনতা, দেহের স্বাধীনতা, আত্মার স্বাধীনতা। সকল বস্তুই সর্বদা মুক্তিলাভ করিতে এবং বন্ধন হইতে ছুটিয়া পলাইতে চেষ্টা করিতেছে। সূর্য চন্দ্র পৃথিবী গ্রহ—সকলেই বন্ধন হইতে পলায়ন করিতে চেষ্টা করিতেছে। সমগ্র জগৎটাকে এই কেন্দ্রাহ্লগ ও কেন্দ্রাতিগা শক্তিদ্বয়ের ক্রীড়াভূমি বল৷ যাইতে পারে। কর্মযোগ আমাদিগকে কর্মের রহস্য—কর্মের প্রণালী শিখাইয়া দেয়। এই জগতে চতুর্দিকে কেবল ধাক্কা না খাইয়া, অনেক বিলম্বে অনেক তর্কবিতর্কের পর প্রত্যেক বস্তুর স্বরূপ-জিজ্ঞামু আমরা কর্মযোগ হইতে কর্মের রহস্য, কর্মের প্রণালী এবং কর্মের সংগঠনী শক্তি শিক্ষা করি। ব্যবহার করিতে না জানিলে আমাদের বিপুল শক্তি বৃথা নষ্ট হইতে পারে। কর্মযোগ কাজ করাকে একটি রীতিমত বিজ্ঞানে পরিণত করিয়াছে। এই বিদ্যা দ্বারা জানিতে পারিবে, এই জগতের সকল কর্মের সদ্ব্যবহার কিভাবে করিতে হয়। কর্ম করিতেই হইবে, ইহা অপরিহার্য—কিন্তু উচ্চতম উদ্দেশ্বে কর্ম কর । কর্মযোগের সাধনায় আমরা স্বীকার করিতে বাধ্য যে, এই জগৎ পাচ মিনিটের জন্য, এবং ইহার মধ্য দিয়াই আমাদের চলিতে হইবে ; আরও স্বীকার করিতে হয় যে, এখানে মুক্তি নাগ, মুক্তি পাইতে হইলে আমাদিগকে জগতের বাহিরে যাইতে হইবে। জগতের বন্ধনের বাহিরে ধাইবার এই পথ পাইতে হইলে আমাদিগকে ধীরে নিশ্চিতভাবে ইহার মধ্য দিয়াই যাইতে হইবে। এমন সব অসাধারণ যং পুরুষ থাকিতে পারেন, যাহাদের বিষয় আমি এইমাত্র বলিলাম, তাহার। একেবারে জগতের বাহিরে অসিয়া দাড়াইয়া উহাকে ত্যাগ করিতে প:রন—যেমন সর্প উহার ত্বক পরিত্যাগ করিয়া বাহির হইতে দেখিয়া ৭:ক । এইসব অসাধারণ মাছুষ কয়েকজন আছেন সন্দেহ নাই, কিন্তু পশিষ্ট মানবগণকে ধীরে ধীরে কর্মময় জগতের ভিতর দিয়াই যাইতে হইবে।